Print Date & Time : 28 July 2025 Monday 2:11 am

কম খরচে বেশি মুনাফা ঠাকুরগাঁওয়ে বাড়ছে সরষের আবাদ

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও জেলার পাঁচ উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠ দিন দিন ছেয়ে যাচ্ছে সরষের হলুদ ফুলে। নয়নজুড়ানো সরষের ফুল এখন প্রকৃতিতে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। আমন ও বোরো মৌসুমের মাঝামাঝিতে কম সময়ে ও স্বল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় সরষে চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন জেলার চাষিরা।

জানা গেছে, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি জমিতে সরষের আবাদ হয়েছে। আমন ধান কেটে একই জমিতে সরষে চাষ করে লাভের আশা করছেন কৃষকরা। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ে গতবারের মতো এবারও সরষে আবাদ ভালো হয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় সরষে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে। আর জেলার পাঁচ উপজেলায় সরষে আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে। উঁচু ভূমির এ জেলা সরষে চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বিগত বছরগুলোয় জেলায় সরষের চাষ কম হতো। তবে সরষে আবাদে খরচ ও শ্রম কম হওয়ায় এবং মুনাফা বেশি হওয়ার কারণে অনেক কৃষক এখন সরষে আবাদ করছেন।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কৃষকরা ভালো দাম ও প্রণোদনা পেলে এ ফসলটির আবাদ বেড়ে যেতে পারে। সূত্র জানায়, সদর উপজেলায় এবার সরষে আবাদ হয়েছে এক হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ৯৫০ হেক্টর, রানীসংকৈলে চার হাজার ৫০০ হেক্টর, পীরগঞ্জ উপজেলায় তিন হাজার ২০০ হেক্টর ও হরিপুর উপজেলায় সরষে আবাদ হয়েছে দুই হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। জেলায় বারি সরষে-১৪, বারি-৪, সোনালি সরষে-৭৫ ও উফশি টরি-৭ জাতের সরষের চাষ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান গ্রামের কৃষক মো. পজিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় এক একর জমিতে সরষের চাষ করেছি। গাছে এখন ফুল ফুটছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলনের আশা করছি।’

একই গ্রামের কৃষক অম্বার চন্দ্র বলেন, ‘গত বছর সরষের চাষ করে ভালো ফলন ও দাম পেয়েছি। তাই এবার দুই বিঘা জমিতে সরষে আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ও বাজারে ভালো দাম পেলে লাভবান হবো।’

কৃষকরা জানান, বাজারে এক মণ সরষের দাম দুই হাজার টাকা বেশি। সরষের মানসম্মত তেলের চাহিদাও বাড়ছে। তাছাড়া অব্যাহত ধান আবাদে জমির উর্বরতা কমে যায়। আমন ধান কাটার পর সেই জমিতে সরষে চাষ করে আবার সে জমিতে বোরো ধান অথবা অন্য ফসল চাষ করা যায়। ধানের জমিতে সরষে আবাদ করা হলে পাতা পড়ে তা পচে জমির উর্বরতা বাড়ে। এসব কারণে তারা সরষের চাষে ঝুঁকে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আফতাব হোসেন বলেন, ‘সরষের ফলন বৃদ্ধি এবং দাম ভালো হওয়ায় এ ফসল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। অনেক কৃষককে প্রণোদনা ও প্রদর্শনী ক্ষেত দেয়া হয়েছে, ভালো মানের বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।’ সরষে কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।