আতাউর রহমান: দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক ইঙ্গিত, যেমন ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস প্রভৃতির সঙ্গে আকস্মিকভাবে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে গত সপ্তাহে সব কার্যদিবসে টানা পতনের মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার, যাকে বলা হয় পুঁজিবাজার একটি বেওয়ারিশ মেজাজে ছিল। কিন্তু চলতি সপ্তাহে কিছু বিনিয়োগকারী বিষয়টিকে তাদের ধারণকৃত শেয়ার অফলোড বা বিক্রি করার জন্য একটি সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। ঠিক একইভাবে অপর কিছু বিনিয়োগকারী সপ্তাহটিকে কম দামে শেয়ার কেনার সুযোগ হিসেবে নিয়ে কাজে লাগিয়েছে। এতে চলতি সপ্তাহে পুঁজিবাজার বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয় দিক থেকে সমানভাবে সক্রিয় থাকলেও শেষ পর্যন্ত ক্রেতারা বাজারে আধিপত্য বিস্তার করেছে বলে লক্ষ করা যায়। এ কারণে চলতি সপ্তাহে মাত্র তিন কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে, সব কার্যদিবসেই পুঁজিবাজারে উত্থান হয়েছে। সেইসঙ্গে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস থেকে লেনদেনও বেড়েছে। এতে শেষ কার্যদিবস গতকাল লেনদেন এক হাজার ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
চলতি সপ্তাহের বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সপ্তাহের শুরুতে প্রথম কার্যদিবসে (রোববার) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৬ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ১৭৫ পয়েন্টে। পরের দিন (মঙ্গলবার) ডিএসইএক্স ৫০ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ২২৬ পয়েন্টে। এবং শেষ কার্যদিবস গতকাল বুধবার ১৫ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বেড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছয় হাজার ২৪১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
আলোচিত সপ্তাহে রোববার ডিএসইর লেনদেনে আগের কার্যদিবস থেকে কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকায়। মঙ্গলবার ডিএসইর লেনদেন আরও বেড়ে হাজার কোটি টাকা পার করে দাঁড়ায় এক হাজার ৩৪ কোটি ৭০ লাখ টাকায় এবং গতকাল ডিএসইর লেনদেন আগের কার্যদিবস থেকে আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৫৯ কোটি ৬০ রাখ টাকা। এতে বাজারে শেয়ার কেনা-বেচা উভয় দিক থেকে চাপ থাকায় এ লেনদেনে বেড়েছে এবং দিন শেষে ক্রেতা বেশি হওয়ায় সূচকের উত্থান হয়েছে বলে জানান বাজারসংশ্লিষ্টরা।
বাজারসংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ইঙ্গিত কোন দিকে যাচ্ছে, এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে দ্বিধা কাজ করছে। যে কারণে গত সপ্তাহে বেশ কিছু বিষয় সামষ্টিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে চাপ ফেলে এবং এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে হতাশা কাজ করতে শুরু করে, যে কারণে গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে টানা পতন হয়েছে এবং একই সঙ্গে লেনদেনও কমছে। এর কারণ হিসেবে ছিল ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, টাকার অবমূল্যায়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি। তবে চলতি সপ্তাহে আবার সেই হতাশা ও দ্বিধা বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ কাটিয়ে উঠেছেন, যে কারণে এ সপ্তাহে শেয়ার বিক্রির চাপ থাকলে শেয়ার কেনারও চাপ ছিল। যারা পতনের সময় শেয়ার ধরে ছিল তারা চলতি সপ্তাহে বিক্রি করার সুযোগ নিয়েছে। যাতে করে আরও বেশি লোকসানে পড়তে না হয় এ চিন্তা করে। অপরদিকে কিছু বিনিয়োগকারী সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কম দামে শেয়ার কেনার চাপ বাড়িয়েছেন, যাতে পরে বাজার ভালো অবস্থায় গেলে ভালো লাভ করতে পারে, সে হিসাব করে।
তারা বলেন, বৈশ্বিক বাজারে বিদ্যুতের দাম সম্প্রতি কমার সঙ্গে সঙ্গে চলমান বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা কমাতে ডলারের ক্রয়-বিক্রয়ের হারের মধ্যে স্প্রেড নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক উদ্যোগ কিছুটা হলেও বিনিয়োগকারীদের হতাশা কমিয়েছে। সাম্প্রতিক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগের প্রতি বাজারের বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে ফার্নেসড অয়েল তেল বিক্রির জন্য রাশিয়ার প্রস্তাবও বিনিয়োগকারীদের মনোভাবকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে। এতে কিছু সতর্ক বিনিয়োগকারী এ বিষয়টিকে তাদের ধারণকৃত শেয়ার অফলোড করার সুযোগ হিসেবে নিচ্ছেন, কারণ তারা এখনও দেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকেত নিয়ে চিন্তিত। আর অপর একদল বিনিয়োগকারী সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফ্লোর প্রাইস বা এর কাছাকাছি দরে থাকা শেয়ার কিনে নিচ্ছেন।