নিজস্ব প্রতিবেদক: আদানির বিদ্যুৎ পরীক্ষামূলক আসা শুরু হয় গত মার্চে। প্রায় এক মাস পর ৬ এপ্রিল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে ভারতের এ কোম্পানিটি। তবে দ্বিতীয় ইউনিট চালুর পর জুলাই থেকে নিয়মিত এক হাজার ৩৫০ থেকে এক হাজার ৪২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল আদানি। যদিও হঠাৎ ৮ অক্টোবর থেকে কয়লা সংকটে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় ইউনিটও চলছে আংশিক।
সূত্র জানায়, ডলার সংকটে আদানির বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বিদ্যুৎ বিলের অর্থ সোনালী ব্যাংকে জমা দিলেও ডলার সংকটে তারা বিল পরিশোধ করতে পারছে না। এজন্য প্রয়োজনীয় ডলার বরাদ্দ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে লবিং করছে পিডিবি ও বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে এরই মধ্যে বিল বকেয়া পড়েছে প্রায় ৩৩০ মিলিয়ন ডলার।
পিডিবির তথ্যমতে, ৭ অক্টোবর পর্যন্ত চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আদানি। ওইদিন সকাল ৭টায় সর্বনি¤œ ৮২৩ মেগাওয়াট ও রাত ১২টায় সর্বোচ্চ এক হাজার ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ৮ অক্টোবরও সকাল ১০টা পর্যন্ত দুটি ইউনিট চালু ছিল। ওই সময় কেন্দ্রটি থেকে এক হাজার ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে। এরপরই কয়লা সংকটে বন্ধ হয়ে যায় আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট।
এমনকি দ্বিতীয় ইউনিটও আংশিক বন্ধ রয়েছে। এতে ৮ অক্টোবর সকাল ১০টার পর থেকে সাড়ে ৫০০ মেগাওয়াটেরও কম বিদ্যুৎ পাওয়া যায় কেন্দ্রটি থেকে। ৯ অক্টোবর কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ মেগাওয়াটের মধ্যেই ছিল। গতকালও কেন্দ্রটিতে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এতে গতকাল পিক আওয়ারে (রাত ৯টায়) আদানির কেন্দ্রটির সক্ষমতার মধ্যে ৯৬০ মেগাওয়াটই বন্ধ ছিল।
সূত্র জানায়, আদানিকে বিল পরিশোধে শুরু থেকেই বিপদে পড়ে পিডিবি। দেশি-বিদেশি ছয় ব্যাংকে যোগাযোগ করেও এলসি খুলতে পারেনি পিডিবি। পরে গভর্নরের নির্দেশে সোনালী ব্যাংক এলসি খুলতে সম্মত হয়। তবে ডলার সংকটে বিল পরিশোধ বিলম্বিত হচ্ছে। পরীক্ষামূলক সময়ের ১৭ মিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত বিল বকেয়া পড়েছে কোম্পানিটির।
এদিকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পর থেকে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিল জমা দিয়েছে আদানি। এর মধ্যে শুধু ৭০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। যদিও আদানির বিলের জন্য আরও অর্থ সোনালী ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে ডলার সংকটে তা পরিশোধ করতে পারছে না ব্যাংকটি। এতে বাধ্য হয়ে ডলারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে লবিং করছে পিডিবি ও বিদ্যুৎ বিভাগ।
তথ্যমতে, পুরোদমে উৎপাদন শুরুর পর আদানির প্রতি ইউনিটের বিদ্যুতের দাম পড়ছে প্রায় ১১ টাকা। এর মধ্যে জ্বালানি বিল প্রায় সাত টাকা ও ক্যাপাসিটি চাজ
চার টাকার কিছু বেশি। এ হিসাবে দৈনিক গড়ে এক হাজার ৩৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আদানিকে শুধু জ্বালানি বিল দিতে হবে ৬২ মিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে ক্যাপাসিটি চার্জ যুক্ত হলে এক মাসের বিল পড়বে গড়ে ৯৫ মিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে জুলাই ও আগস্টের বিলই প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ডলার।
এর আগে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত আদানির একটি ইউনিট চালু ছিল। ওই সময়ের শুধু জ্বালানি বিলের পরিমাণ প্রায় ১৩৫ মিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে ক্যাপাসিটি চার্জ যুক্ত হয়ে তিন মাসের বিল বকেয়া ছিল প্রায় ২৩০ মিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত বিল দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার। তবে সেপ্টেম্বরের বিল যুক্ত হলে তা প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে।
আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ কমার বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এসএম ওয়াজেদ আলী সরদার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আদানি আমাদের জানিয়েছে, কয়লা সরবরাহকারী কোম্পানি কয়লা না দেয়ায় তারা বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। তবে আমরা এস আলম ও মাতারবাড়ী থেকে পরীক্ষামূলক কিছু বিদ্যুৎ পাচ্ছি। এগুলো দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব।’
যদিও পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পর থেকে আগস্ট পর্যন্ত তারা বাংলাদেশকে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বিদ্যুৎ দিয়েছে। প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাব করলে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ৭০ মিলিয়ন ডলার বা ৭৭০ কোটি টাকা। ফলে এখনও বকেয়া ৩ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। বকেয়া না দেয়ায় তারা কয়লা আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। এতে উৎপাদন কমে গেছে।
প্রসঙ্গত, ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় নির্মিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতা এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। তবে চুক্তি অনুযায়ী কেন্দ্রটি থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার ৪৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব।