করদাতা শনাক্তকরণে সতর্কতা জরুরি

১২ লাখ নতুন করদাতা বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে জরিপ পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সর্বত্র এ কার্যক্রম বিস্তারধর্মী। সারা দেশেই মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটেছে। ফলে করদানে সক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই বাড়ার কথা। বহিরাঙ্গন ও অভ্যন্তরীণ উভয় জরিপের তথ্য যাচাই করে কর নির্ধারণ করার পরিকল্পনাটি কৌশলী। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের করজাল পরিধি বৃদ্ধির কার্যক্রমে যেভাবে স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা এসেছে, গৃহসম্পত্তি বিচারে করদাতা নির্বাচনের সেভাবে সফলতা আসেনি। গৃহসম্পত্তির সঠিক তথ্য খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া জরুরি। তাছাড়া যারা নিয়মিত কর দিচ্ছেন তারা যেন কোনোভাবে জরিপ টিমের মাধ্যমে বিরক্তি বা হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়েও সজাগ থাকা বাঞ্ছনীয়।

এ বিষয়ে গতকালের দৈনিক শেয়ার বিজ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গৃহসম্পত্তির সার্বিক আকার ও পরিমাণ মূল্যায়ন এবং ইউনিয়ন ও সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি বিলের উপাত্তকে আড়াআড়ি যাচাইয়ে একজন নাগরিকের করদান সক্ষমতা বিচার করার কৌশলটি প্রশংসনীয়। আগে করজাল বৃদ্ধির লক্ষ্যে যত জরিপ হয়েছে তাতে ভালো ফল আসেনি। নানা রকম অভিযোগে স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তবে গত মৌসুমের প্রতিটি ক্ষুদ্র জরিপ দলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তিতে জরিপের স্বচ্ছতা ও পরিধি বেড়েছে। অর্থাৎ এবারের প্রতিটি ক্ষুদ্র দলে একাধিক ছাত্রের পাশাপাশি একজন ছাত্রীকে রাখার কৌশল অভিনব বলতে হবে।

কেননা কেবল পুরুষনির্ভর জরিপ দল গৃহসম্পত্তি অনুসন্ধানে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। এক্ষেত্রে ফলাফল আসে দুর্বল। আবাসন ব্যবসা এখন উদীয়মান আর্থিক খাত হওয়ায় এ বিষয়ে সঠিক তথ্য নেওয়ার জন্য মাধ্যমিক উৎসের তথ্য নিতে জরিপকারী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তথ্যপ্রদানকারীদের আন্তরিক হতে হবে। ভৌগোলিক সীমানা, জনসংখ্যা ও অধিক্ষেত্রাধীন এলাকার অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় করদাতা সম্প্রসারণের গৃহীত লক্ষ্যমাত্রার সফলতা গৃহীত অনুকল্পের সঠিকতার মাত্রার ওপর নির্ভর করছে। আঞ্চলিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি করদানযোগ্য ব্যক্তি থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হয়ে গেলে জরিপকারীরা জরিপ শেষ করতে পারে। তাতে সবাইকে করজালে আনা সম্ভব হবে না। তাছাড়া এনবিআরের যে লোকবল রয়েছে তা দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ জরিপ কাজ সম্পন্ন করা দুরূহ। অনেকেই টিইএন থাকার পরও কর দিচ্ছেন না। তবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার এখতিয়ার জরিপ দলের নেই। এমন অভিযোগ জরিপ দলের সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এক্ষেত্রে এনবিআর ও জনসাধারণ উভয়কেই সতর্ক হতে হবে। জরিপ দলের পরিচিতি নিশ্চিত করতে সদস্যদের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক, তবে পাশাপাশি তাদের কাজ প্রতিটি অঞ্চল থেকে ভালোভাবে তদারকি করার বিকল্প নেই।