করদান প্রক্রিয়া সহজ করতে ব্যবস্থা নিন

জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়ন করার জন্য জাতীয় স্বার্থেই দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতিশীলতা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে একটি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব ও উৎপাদনশীল টেকসই আয়কর পরিকাঠামো নিশ্চিত করা অপরিহার্য। গত ফেব্রুয়ারিতে করকাঠামো নিয়ে ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সংগঠন এফবিসিসিআই সরকারের বিবেচনার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে।

সংগঠনটি আয়কর আইনের মৌলিক বিষয়গুলো আবশ্যিকভাবে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা এবং দেশের বিনিয়োগ চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে যুগোপযোগী আয়কর আইন প্রণয়ন, রাজস্ব বৃদ্ধি এবং ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির জন্য উপজেলা পর্যায়ে আয়কর দপ্তর স্থাপনসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা সে সময় স্বেচ্ছাধীন পদ্ধতি পরিহার করে কেবল সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এবং সেই সম্পর্কে করদাতার ব্যাখ্যা গ্রহণ করে আয়কর কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা প্রয়োগের বিধান সীমিত করার আহ্বানও জানিয়েছিল।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কর অঞ্চল-১ ও ঢাকা আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী-করদাতারা কর প্রদান আরও সহজ এবং করদাতাদের সঙ্গে আরও বেশি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করার অনুরোধ জানিয়েছেন। কর প্রদান আরও সহজ এবং বাধা দূর করার ক্ষেত্রে কর বিভাগ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কর কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কমিশনার বলেছেন, রাষ্ট্রের পাওনা কর দেয়া করদাতার দায়িত্ব। সেটা না দিলে করদাতার আত্মা পরিপূর্ণ শুদ্ধ হবে না। একইভাবে কর কর্মকর্তারা যদি সঠিকভাবে সেবা না দেন, তাহলেও তারাও করদাতাদের প্রতি অন্যায় করবেন। তারা কিন্তু আত্মার পরিশুদ্ধি লাভ করবেন না।

আমাদের ব্যবসায়ীরা সর্বোত্তম চর্চার কথা বললেও তারা ঠিকমতো কর দেন না, এমনই ধারণা সাধারণ মানুষের। অনেকে এও বলেন, এ লক্ষ্যে কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশও করেন। আমরা ঢালাও সমালোচনার পক্ষপাতী নই। তবে এটি সত্য, সরকারের কাছ থেকে সময় সময় সুযোগ-সুবিধা ও ছাড় আদায় করে নিলেও তারা নৈতিকতা ও স্বচ্ছতার পরিচয় দিতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

আমরা বিশ্বাস করি, করদাতারা যথানিয়মে কর দিতে চান। আয়কর জাতীয় উন্নয়নের অক্সিজেন। এটি সংগ্রহে এনবিআর কর্মীদের দায়িত্বপরায়ণ হতে হবে। কেউ কেউ কর ফাঁকি দিতে কর বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে দেন-দরবার করেন। কর বিভাগ অবশ্যই করদাতাদের সহযোগিতা করবে। তবে তাতে যেন ব্যক্তিস্বার্থের সংশ্লেষ না থাকে। করদাতারা অকারণে হয়রানি ছাড়াই নির্ভয়ে ও স্বচ্ছন্দে রিটার্ন জমা দিতে পারেন, তা নিশ্চিতে আন্তরিক হতে হবে এনবিআর কর্মীদের। আয়কর দিতে গিয়ে কেউ যেন কোনো প্রকার ভীতির সম্মুখীন না হন, সে বিষয়ে সর্বদা সচেতন থাকতে  হবে কর কর্মকর্তাদের। উন্নত দেশগুলোয় স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই আয়কর দেন করযোগ্য ব্যক্তিরা। করদাতা ও কর বিভাগের কর্মীদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকলে আমাদের দেশেও সে সংস্কৃতি চর্চা সম্ভব। কর প্রদানে জটিলতা ও বৈষম্য দূর করে নীতিনির্ধারকদেরও উচিত করকাঠামো ও করদান প্রক্রিয়া ঢেলে সাজানো।