Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 4:28 pm

করপোরেট কর ছাড়ের প্রভাব নেই ব্যাংক খাতে

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক খাতের করপোরেট কর ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ঘোষণানুযায়ী এ খাতের কর ছাড় দেওয়া হবে দুই দশমিক ৫০ শতাংশ। এই খবরে খাতটি ঘুরে দাঁড়াবে এমন প্রত্যাশা ছিল সবার, কিন্তু হচ্ছে তার উল্টো। বিনিয়োগকারী টানতে ব্যর্থ হচ্ছে এ খাত। আগের মতো এসব শেয়ারের দরপতন অব্যাহত থাকায় খাতটির প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ার বদলে আরও কমে যাচ্ছে। গতকাল এ খাতের ৪২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর পতন হয়েছে। ফলে এসব শেয়ার নিয়ে দোলাচলে পড়েছেন তারা।
এদিকে পরিস্থিতি সাময়িক কিছুটা মন্দা হলেও এই খাত ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত ব্যাংক খাত হচ্ছে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী খাত। বর্তমানে এই খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বিনিয়োগযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। অনুকূলে রয়েছে এসব শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত। ফলে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে অনেকটা নিরাপদ।
এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এই খাতের বেশিরভাগ ব্যাংকের সর্বশেষ লভ্যাংশ প্রদান শেয়ারহোল্ডারদের মনঃপূত হয়নি। সে কারণে এই খাতের শেয়ারের চাহিদায় ভাটা পড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারেও। তবে খাতটি এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তবে করপোরেট কর ছাড় এই খাতের জন্য কোনো সুখর আনবে না বলে জানান তিনি।
বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৪০ শতাংশ, যা আগামী অর্থবছরে দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ কমিয়ে ৩৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ করা হবে। এছাড়া তালিকাভুক্ত নয় এমন ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব এসেছে।
অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংক হচ্ছে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে শক্তিশালী খাত। বিভিন্ন অনিয়মসহ এসব প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ প্রদানের হার ও মুনাফা কমেছে। সেই কারণে বিনিয়োগকারীদের এই খাতের কোম্পানির প্রতি এক ধরনের অনীহা তৈরি হয়েছে। তবে এসব শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভয়ের কিছু আছে বলে মনে করি না, কারণ এখন অধিকাংশ শেয়ারের দর যে পরিস্থিতিতে রয়েছে এখান থেকে খাতটির ঘুরে দাঁড়ানো উচিত।
প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, অনেকে বলে থাকেন আমাদের করপোরেট করহার খুব বেশি, যা ঠিক নয়। দেশের তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিদ্যমান ২৫ শতাংশ করহার দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের তুলনায় কম। তবে ব্যাংক খাতের করহার কিছুটা বেশি হওয়ায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার দুই দশমিক ৫০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করছি। তবে অন্যান্য করহার অপরিবর্তিত থাকবে।
তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে রাজস্ব কিছুটা কমলে বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক বার্তা পাওয়া যাবে। বর্তমানে সর্বোচ্চ করহার হবে ৪০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় হারটি হবে ৩৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ। একমাত্র তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী ও নন-পাবলিক ট্রেডেড মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি এর চেয়ে উচ্চহারে কর দেবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমেছে। এ সময়ে ২৯টি ব্যাংক ৯৮৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ১৭০ কোটি টাকা কম। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকগুলো এক হাজার ১৫৮ কোটি টাকা মুনাফা করে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সর্বশেষ প্রান্তিকে ১১ ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে, কমেছে ১৮টির।