করব্যবস্থার সংস্কারের সুফল নিশ্চিত হোক

শুল্ক-কর প্রশাসনে বড় ধরনের সংস্কার আনা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে পৃথক দুটি বিভাগ সৃষ্টি করা হবে। সোমবার অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগটি শুল্ক-কর আদায়ের কাজ করবে। আর রাজস্ব নীতি বিভাগ শুল্ক-কর হার বৃদ্ধি বা কমানোর বিষয়টি ঠিক করবে। দুই বিভাগই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় কাজ করবে। কর বসাবে এক সংস্থা, আদায় অন্য সংস্থা-এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা শুরু হয়েছে।
শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কলমবিরতি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা। অবশ্য অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এ সংস্কারের ফলে কর প্রশাসনের আধুনিকীকরণ, রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষ হবে। এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তারা মনে করেন, এর ফলে রাজস্ব খাতে প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য বাড়তে পারে। সীমিত হতে পারে শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের সুযোগ। অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, এনবিআরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এটিই করা হয়েছে। বিশ্বের সব দেশেই রাজস্ব নীতি ও বাস্তবায়ন বিভাগ পৃথক। যারা নীতি প্রণয়ন করবেন, তাদের পেশাদার হতে হবে। অর্থাৎ দেশের জিডিপি, অর্থনীতি, পরিসংখ্যানÑএসব বিষয়ে ধারণা থাকতে হবে। যারা নীতি প্রণয়ন করবেন, তারা আবার রাজস্ব সংগ্রহও করবেন, তা হতে পারে না।
এনবিআর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ; এটি এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন। কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে এনবিআর পুনর্গঠনে কতটা সুফল আসে, সেটিই মূল কথা।
এনবিআরের বিভিন্ন দপ্তরে যাওয়া সেবাপ্রত্যাশীদের অভিজ্ঞতা তিক্ত। রাজস্বকে বলা হয় জাতীয় উন্নয়নের অক্সিজেন। এত দিন একক সংস্থা হিসেবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব সংগ্রহে এনবিআর বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এখন দুই সংস্থা হওয়ায় রশি টানাটানির আশঙ্কা থাকবে। তাই স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা গুরুত্বপূর্ণ।
যারা রাজস্ব ফাঁকি দেন, তাদের যথাযথ তদারকির আওতায় আনা এবং যথানিয়মে রাজস্ব দেন, তারা হয়রানির শিকার না হন। আইন তৈরি হয়, তবে বাস্তবায়ন করা হয় না; এটি আমাদের বড় সীমাবদ্ধতা! সুষ্ঠু কর সংস্কৃতি গড়ে তুলতে বিভিন্ন খাতের সরকারি সেবা নিশ্চিত করতে হবে। ইএফডি যন্ত্র দোকানে আছে, কিন্তু তা ব্যবহার করা হয় না। ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দেন না। ভ্যাট দেন ভোক্তারা। অনেক ক্ষেত্রে বিক্রেতারা ভোক্তার কাছ থেকে ভ্যাট নিয়ে জমা দেন না। এমন অনাচার থেকে বেরিয়ে এলেই কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় সম্ভব।  আগে কর ব্যবস্থাপনা ছিল অনেক বেশি গতানুগতিক। এখন কর প্রশাসন আধুনিকীকরণ ও ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষ হবে, তাই কর-জিডিপি হার বাড়নোসহ প্রত্যাশিত।