আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে আগামী বাজেটে জনগণের ওপর নতুন করে কোনো করের বোঝা চাপানো হবে না বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন। বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনের আগে অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদেদের সঙ্গে প্রতিবছরই মতবিনিময় করা হয়, তাদের পরামর্শ চাওয়া হয়। অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, ‘দেশের জনগণের কষ্ট বা ভোগান্তি যাতে করে না বাড়ে এবং তাদের ওপরে যেন বোঝা বেশি না বাড়ে সেগুলোর জন্য আমরা কাজ করছি। আশা করছি, এগুলো কমবেশি বিবেচনায় নেব।’
যতই বলা হোক কভিড অভিঘাত মোকাবিলা করে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে কিন্তু কতটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সে বিষয় মন্ত্রী সবিশেষ অবহিত আছেন বলেই প্রতীয়মান। হয়তো এ কারণেই তিনি কর না বাড়ানোর বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কর না বাড়ানোর বিষয়ে খোলাসা করা হয়নি। দেশে অনেক ধরনের যে কর আছে। প্রত্যক্ষ কর দৃশ্যমান। পরোক্ষ কর দৃশ্যমান নয়। কিন্তু সেটি যেন সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণ না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে।
বাজেটের সঙ্গে দেশের উন্নতি-অগ্রগতি এবং জনগণের ভাগ্য অনেকাংশে জড়িত। বাজেটের ওপর ভিত্তি করে একটি দেশ যেমন এগিয়ে যায়, তেমনি অপরিকল্পিত বাজেটের কারণে একটি দেশের অর্থনীতি পিছিয়ে যেতে পারে, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়তে পারে। তাই স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাজেট প্রণয়নে দেশ ও মানুষের কল্যাণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কম গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে বাজেটকে উচ্চভিলাষী না করে ভারসাম্যপূর্ণ করতে হবে।
বাজেট প্রণয়নের আগে মোটামুটিভাবে সব শ্রেণির মানুষের মতামত নেয়া হয়। দেখা যায়, সবাই নিজেদের ব্যবসা-পেশার উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরামর্শ দেন। কোনোভাবেই শ্রমজীবী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যেন করভারে জর্জর না হন, এটিও মনে রাখতে হবে। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রতি বছরই থাকে। হয়তো এবারও থাকবে। অপ্রদর্শিত কিংবা অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ বৈধ করা সুযোগ যারা পায় তারা আর যা-ই হোক, নিরীহ নয়। রাষ্ট্র ও জনগণের কাছ থেকে দুর্নীতি ও অসদুপায়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া ব্যক্তিরা রাষ্ট্রের আনুকূল্য পাবে আর প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করবে এটি এক ধরনের বৈষম্য। কভিড মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে একপ্রকার মন্দার শিকার। বাংলাদেশও এ থেকে মুক্ত নয়। একজন ব্যক্তি নিজের উপার্জন দিয়ে জীবন নির্বাহ করতে না পারলে তার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান তথা ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা কীভাবে পূরণ করা যায়, সে জন্য সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। মন্ত্রী যেসব কথা বলেছেন, তার বাস্তব রূপ বাজেটে প্রতিফলিত হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।