Print Date & Time : 13 September 2025 Saturday 3:28 am

করোনাধাক্কা সামলে ফের চাঙা এজেন্ট ব্যাংকিং

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে চালু হয় এজেন্ট ব্যাংকিং। সহজেই ব্যাংকে টাকা জমা ও উত্তোলন, রেমিট্যান্স পাঠানোসহ বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবা পাওয়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে জনপ্রিয় এক নাম এটি। করোনার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছিল দেশের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম। তবে পুনরায় চাঙ্গা হয়ে উঠেছে এজেন্ট ব্যাংকিং।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কার্যক্রম শুরুর মাত্র আট বছরেই এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ২৯ লাখ ১১ হাজার ৫৪১টি। এসব গ্রাহক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় জমা করেছেন সাড়ে ২২ হাজার ২৬১ কোটি টাকার আমানত। হিসাব অনুযায়ী, বছরের ব্যবধানে আমানত বেড়েছে ৭০ শতাংশ।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি ২৯টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের এজেন্ট সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৭০টি ও আউটলেটের সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৭টি। এসব এজেন্ট ও আউটলেটের মাধ্যমে খোলা হিসাবধারীদের অর্ধেকই নারী। তথ্য বলছে, এজেন্টদের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৩ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকার।

এক বছরের ব্যবধানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহ বেড়েছে ৯৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। কারণ গত (২০২০) বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ৩৮ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা রেমিট্যান্স এসেছিল এজেন্টের মাধ্যমে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে ৭৪ হাজার ৮৮৩ কোটিতে পৌঁছেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান হলো দেশের এজেন্ট আউটলেটগুলোর মধ্যে ২ হাজার ৩৫৮টি শহর এলাকায়, যা মোট আউটলেটের প্রায় ১৩ শতাংশ। বাকি ১৫ হাজার ৭১৯টি গ্রামে। ঋণ বিতরণের দিক থেকে শহর অঞ্চলে বিতরণ করা হয়েছে ৩৬ শতাংশ। বাকি ৬৪ শতাংশ বিতরণ হয়েছে গ্রামে।

আমানত সংগ্রহের দিক থেকে সবার ওপরে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। কারণ মোট আমানতের ৩৬ দশমিক ১৬ শতাংশ এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এর পরেই রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। মোট আমানতের ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ সংগ্রহ করেছে ব্যাংকটি। এছাড়া আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও অগ্রণী ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করেছে যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৭৬, ১৩ ও ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। মোট ঋণের ৬৪ শতাংশ বিতরণ হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে বিতরণ হয়েছে ১৭ শতাংশ। এছাড়া দ্য সিটি ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ হয়েছে যথাক্রমে ১১, ৪ ও ৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যয়সাশ্রয়ী এ সেবায় গ্রাহক এজেন্ট আউটলেটে সহজেই তার বায়োমেট্রিক বা হাতের আঙুলের স্পর্শে হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। ফলে কম খরচে সহজে ব্যাংকিং সেবা পাওয়ায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ব্যাংকগুলোও এ সেবা প্রদানে আশানুরূপ আগ্রহ দেখাচ্ছে। তারা বলছেন, সঠিকভাবে পরিচালনা করলে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে আগামীতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ঘরে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে এমন ব্যক্তি এজেন্টশিপ নিতে পারেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হয় ন্যূনতম এইচএসসি বা সমমান পাস। এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে প্রত্যেক এজেন্টের একটি চলতি হিসাব থাকতে হয়। এ সেবার মাধ্যমে ছোট অঙ্কের অর্থ জমা ও উত্তোলন করা যায়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স স্থানীয় মুদ্রায় বিতরণ, ছোট অঙ্কের ঋণ বিতরণ ও আদায় এবং এককালীন জমার কাজও করা যায় এই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। সেবা বিল পরিশোধের পাশাপাশি সরকারের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ প্রদান করতে পারছেন এজেন্টরা। এছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব খোলা, ঋণ আবেদন, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নথিপত্র সংগ্রহ করতে পারছে এসব এজেন্ট।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), রেমিট্যান্স উত্তোলন, বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন প্রকার ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সব ধরনের ভর্তুকি গ্রহণ করা যায়। তবে এজেন্টরা কোনো চেক বই বা ব্যাংক কার্ড ইস্যু বা বৈদেশিক বাণিজ্য-সংক্রান্ত কোনো লেনদেনও করতে পারেন না। এছাড়া এজেন্টদের কাছ থেকে কোনো চেকও ভাঙানো যায় না। মোট লেনদেনের ওপর পাওয়া কমিশন থেকেই এজেন্টরা আয় করেন।