নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের কর্মক্ষম ব্যক্তির এক-তৃতীয়াংশই হচ্ছে যুবসমাজ, যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। এটি বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড। আবার করোনা শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে যুবসমাজের হার সবচেয়ে বেশি। এজন্য অপুষ্টি, বেকারত্ব ও স্বল্প আয় দায়ী। তাই মানবসম্পদ উন্নয়নে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আরও বরাদ্দ বৃদ্ধি জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুবসমাজের উন্নয়নে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ নিয়ে আয়োজিত আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা এমন মতামত দেন। যৌথভাবে অনলাইন মাধ্যমে আলোচনা সভার আয়োজন করে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ।
সানেম গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশার সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধে সানেমের গবেষক ইসরাত শারমিন উল্লেখ করেন, বর্তমানে দেশের যুব বা তরুণসমাজের হার হচ্ছে মোট জনসংখ্যার ২৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। সামনের দিনগুলোয় এ হার কমে আসবে। এখনই সময় হচ্ছে এ যুবসমাজকে মানবসম্পদে পরিণত করার।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে উল্লেখ করা হয়, দেশে কর্মক্ষম যুবসমাজের সংখ্যা হচ্ছে চার কোটি ১৩ লাখ, যা মোট শ্রমশক্তির ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশ। যুবসমাজের ৮৯ দশমিক ২০ শতাংশই হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে সম্পৃক্ত। দারিদ্র্যের কারণে শিক্ষায় ঝরে পড়া ও দক্ষতা না থাকায় স্বল্প আয়েই তাদের নির্ভরশীল হতে হয়। আয় কম হওয়ায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে না। এতে স্বাস্থ্যগতভাবেও দুর্বল হয়ে পড়ছে তারা।
এর বড় উদাহরণ হচ্ছে সাম্প্রতিক করোনা মহামারিতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য। করোনা-আক্রান্তের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আলোচনায় উল্লেখ করা হয়, জুন পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে ২৮ শতাংশ যুবসমাজের অন্তর্ভুক্ত, যাদের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছর। আবার ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সিদের আক্রান্তের হার হচ্ছে ২৭ শতাংশ। এ হিসাবে দেখা যায়, দেশে করোনা-আক্রান্তদের মধ্যে যুবসমাজের হার বেশি।
করোনা মহামারির প্রভাবে দুই কোটি যুবকের আয়ের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যুবসমাজের ৪৮ শতাংশই দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে। কারণ হিসেবে বলা হয়, যুবসমাজের ২৫ শতাংশ দরিদ্র পরিবার থেকে আসা। অদক্ষ হওয়ায় তাদের আয়ও সেভাবে বাড়ছে না। অপরদিকে শিক্ষিত যুবসমাজের মধ্যে বেকরত্বের হার সবচেয়ে বেশি।
আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, তরুণদের এখন ভোকেশনাল শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। চাহিদার আলোকে সময়োপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সবাই একমত হবেন যে, আমাদের শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন। ২০১৬ সালে ন্যাশনাল ইয়ুথ অ্যাকশন প্ল্যানে যে সুপারিশ করা হয়েছিল, সেটা এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে পরিবর্তন না হলে অন্যসব অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। দেশের সব হাসপাতাল মিলে মাত্র এক হাজার দুইশ’র মতো আইসিইউ আছে। এটা অন্তত তিন হাজারে উন্নীত করা উচিত। বাজেট ঘাটতি বাড়িয়ে হলেও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বাড়তি বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। মানবসম্পদ উন্নয়নবান্ধব বাজেটের মাধ্যমে বৈষম্য দূরীকরণে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, যুবসমাজের জন্য একটি বাজেট ফ্রেমওয়ার্ক করা যেতে পারে। আমরা একটি গবেষণা করেছি। মন্ত্রণালয় এটি কাজে লাগাতে পারে। ভবিষ্যতে যুবসমাজের জন্য করণীয় নিয়ে বড় পরিসরে ভাবা যেতে পারে।
সায়েমা হক বিদিশা বলেন, এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব চলছে। এ বিপ্লব থেকে সুবিধা নিতে পারার মতো করে মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। এই শিল্পবিপ্লবের উপযোগী করে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারলে আগামীতে বেকারত্ব ঘুচবে। তা না হলে বেকারত্ব সমস্যা থেকে যাবে।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাকশন এইডের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ফারাহ কবির বলেন, করোনা মহামারি প্রতিরোধের জন্য যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, সেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপরই সফলতা নির্ভর করছে।