রহমত রহমান: রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো এক রাজস্ব কর্মকর্তা মারা গেছেন। ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন। শনিবার (১৩ জুন) ভোর ৪টা ৩৮ মিনিটে রাজধানীর উত্তরা তুরাগের ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন। খোরশেদ আলম নামে এ রাজস্ব কর্মকর্তা ঢাকা কাস্টম হাউসের রপ্তানি পরীক্ষণে কর্মরত ছিলেন।
## করোনায় দুইজন রাজস্ব কর্মকর্তা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন
## রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগে আক্রান্ত ৯০
বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এবং ভ্যাট, নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমান শেয়ার বিজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ রাজস্ব যোদ্ধার মৃত্যুতে অ্যাসোসিয়েশন থেকে শোক জানানো হয়েছে।

খোরশেদ আলমের বন্ধু ও রাজস্ব কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন বিশ্বাস জানান, চাকরি জীবনে আমার কাছের সহকর্মী। ৩০ বছরের বন্ধু। অনেক দিনের প্রেসার ও ডায়েবটিসের রোগী। গত আগস্টে ঢাকা কাস্টম হাউসে পোষ্টিং হয়েছে। বাসা টঙ্গী, তাই মোটামুটি খুশিই ছিল। বিমানবন্দর টার্মিনালে ছয়মাস ডিউটি করে বর্তমানে রপ্তানি শাখায় পোস্টিং ছিল। বেশ কিছুদিন আগে শরীরে জ্বর থাকায় অফিস থেকে ছুটি দেয়া হয়। পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ আসে এবং হোম কোয়ারেন্টিনে থাকে এবং টেলিফোনে চিকিৎসা নেয়।
তিনি বলেন, গত দুইদিন শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি হয়। আজ সকালে মারা যান। তিনি বলেন, তার জন্ম ১৯৬২ সালের ৫ জুন শেরপুর জেলায়। ১৯৮৮ সালের এপ্রিলে ঢাকা কালেক্টরেটে এক নিয়োগপত্রে আমাদের দু’জনের চাকরি হয়। কোন কাজ হলে বলতো, ভাই আমি যেন বাদ না পরি। সাদা মনের মানুষটি কারো সাথে কোনদিন তর্ক করতেও দেখিনি। মহামারির মৃত নাকি নিষ্পাপ। আল্লাহ্ তাকে মাফ করে দাও।

রাজস্ব কর্মকর্তা খোরশেদ আলমের মেয়ে মীম জানিয়েছেন, হাসপাতালে পরীক্ষায় তার নমুনা পজেটিভ এসেছে। স্বামীর মৃত্যুর কথা শুনে তার মা (খোরশেদ আলমের স্ত্রী) ব্রেন স্ট্রোক করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন প্রেসার ও ডায়াবেটিকের রোগী ছিলেন। কিছুদিন আগে তার জ্বর আসে। নিজ উদ্যোগ নমুনা পরীক্ষা করলে তার করোনা পজেটিভ আসে। তখন থেকে তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত দু’দিন তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। পরে শুক্রবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

কমিশনার সৈয়দ মুসফিকুর রহমান জানান, দায়িত্বরত অবস্থায় তার করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর থেকে গত ১৫ দিন ধরে তিনি বাসায় আইসোলেশনে ছিলেন। গতকাল রাতে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাকে ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভোর রাতের দিকে তিনি মারা গেছেন। তিনি দুই সন্তান রয়েছেন। মৃত্যু সংবাদ শোনার পর সকালে তার স্ত্রী ব্রেন স্ট্রোক করেছেন।
ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসন জানান, এ কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হলেও যথার্থ চিকিৎসা ও পরিচর্যার কারণে প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। আগামীকাল কাজে যোগদানের অনুমতিও চেয়েছিলেন। এর মধ্যে আকস্মিক এ দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়। তিনি কর্মঠ, সদালাপী, বিনয়ী ও প্রবীণ এ সহকর্মীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।

হাসপাতাল থেকে ঢাকাএভ এর সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ ফোনে শেয়ার বিজকে বলেন, ২৮ মে থেকে তিনি অসুস্থ। করোনার উপসর্গ থাকায় বাসায় আইসোলেশনে ছিলেন। গত তিনদিন আগে পরীক্ষায় তার টাইফয়েড ধরা পড়ে। শুক্রবার শ্বাসকষ্ট বাড়লে তাকে ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অত্যন্ত সাধারণ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন তিনি। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন। লাশ দাফনের জন্য পরিবারের সহায়তায় শেরপুর নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে প্রশাসনের সহায়তায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে দাফন করা হবে।

আরো পড়ুন-করোনায় প্রথম এক ‘কাস্টমস’ কর্মকর্তার মৃত্যু
এর আগে ৩ জুন করোনা আক্রান্ত হয়ে জসিম উদ্দিন মজুমদার নামে এক রাজস্ব কর্মকর্তা মারা গেছেন। তিনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কর্মরত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগে দুইজন কর্মকর্তা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন।
রাজস্ব কর্মকর্তা খোরশেদ আলমের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সৈয়দ এ মু’মেন শেয়ার বিজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চেয়ারম্যান শোক বার্তায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যবরণকারী এ রাজস্ব কর্মকর্তা’র মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন। পাশাপাশি তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। পরম করুনাময় আল্লাহ্ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন এবং পরিবারের সবাইকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দিন।
এ রাজস্ব কর্মকর্তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশ কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট এক্সিকিউটিভ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাকাএভ)।