করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে ব্যাংকিং খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) কারণে দেশের অর্থনীতি এখন বিপর্যস্ত। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কিন্তু এখনো ধারণা করা যাচ্ছে না এর ক্ষতির মাত্রাটি কতো হবে। এখন পর্যন্ত ক্ষতির হিসাব দেখলে ধারণা করা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে দেশের ব্যাংক খাত।

## দেশের অর্থনীতি চলে মূলত ব্যাংক খাতের নেতৃত্বে

এজন্য একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি করা প্রয়োজন। কমিটির নেতৃত্বে ব্যাংক খাতের ঝুঁকি নির্ধারণ, পর্যক্ষেণ ও ব্যাংকিং খাতকে পূণরুদ্ধারে পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআবিএম)।

আজ ১৬ মে (শনিবার) করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব নিয়ে এক কর্মশালার আয়োজন করে। এটি প্রথম বারের মতো অন-লাইন মাধ্যম ব্যবহার করেছে বিআইবিম। ‘অর্থনীতি, মুদ্রানীতি এবং আর্থিক খাতে কোভিড-১৯- এর প্রভাব: বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের প্রস্তুতি’ শীর্ষক কর্মশালাটির সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড.শাহ মো. আহসান হাবীব। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়,আমাদের আমদানি-রপ্তানি কমে গেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। ব্যবসায়ীক কার্যক্রম সীমিত হয়েছে। এজন্য অর্থনৈতিক ও আর্থিক পুন:রুদ্ধারে ব্যাংকিং খাতের সুসংগঠিত কার্যপ্রস্তুতি প্রয়োজন। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করোনা সংক্রান্ত অর্থনৈতিক ও আর্থিক কার্যক্রমে ব্যাংকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যেক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে অর্থনৈতিক পুন:রুদ্ধারে সহযোগিতার পাশাপাশি নিজস্ব ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায়ও মনোযোগ দিতে হবে।

কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন বিআইবিএমের ড. মোজাফফর আহমদ চেয়ার প্রফেসর ড. বরকত-এ -খোদা, মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া, মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনুদ্দিন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব-উল-আলম, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের কন্ট্রি রিপ্রেজেন্টাটিভ নাসির এজাজ বিজয়।

এছাড়া বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী, অধ্যাপক এবং পরিচালক (ডিএসবিএম) মোহাম্মদ মহীউদ্দিন ছিদ্দিকী ও অধ্যাপক মো. নেহাল আহমেদ।

ডা. আখতারুজ্জামান বলেন, অর্থনীতির বিষয়গুলো বিশেষ করে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে একটি ধারণা করা দরকার। কারণ প্রবৃদ্ধির একটি ধারণা থাকলে ব্যাংকারদের সহজ হবে ব্যবসা সম্পর্কে।

ব্যাংকার আনি এ খান বলেন, আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে ঘণবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। ভবিষ্যতে অনেক পরিবর্তন আসবে জীবন-যাপনে। বিশেষ করে অর্থের ব্যবস্তাপনায়। দেশের ব্যাংক খাতেও মার্জার হতে পারে। এটিএম বুথ শেয়ারের মাধ্যমে সংখ্যা কমিয়ে আনা যেতে পারে। এতে ব্যয় কমে আসবে।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এক গবেষণায় উঠে এসেছে ৬৮ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের বাঁচতে হবে। তাদের জন্য ঋণ ব্যবস্তাপনা নিয়ে আসতে হবে। গত কয়েক বছর ধরে দেশের ব্যাংকিং খাত এমনিতেই ভালনেরাবল অবস্থায় আছে। ৯ শতাংশ সুদ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ব্যাংকের আয় কমে গিয়েছে। তাই ব্যাংকের বিষয়গুলোও দেখতে হবে। সিএসআর বাস্তবায়নসহ ব্যাংকের আয়ে কর হার পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব-উল-আলম বলেন, মানবিক হওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত হওয়ার সময় এখন। ব্যাংকগুলোকে কর্পোরেট সিটিজেন এর দায়িত্ব পালন করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংকের ব্যালেন্সশিটও দেখতে হবে। যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের টেনে তোলার কাজ ব্যাংক করছে। এটি আরও করতে হবে। কিন্তু এরপরও ব্যাংকের স্বাস্থকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

আলী হোসেন প্রাধানিয়া বলেন, ঘোষিত প্রণোদনা বাস্তবায়নে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এখন দেখা দরকার দেশের ব্যাংকগুলো এই অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবে কি না।

ফারুক মঈনুদ্দিন বলেন, সব অফিস বন্ধ থাকলেও করোনা ঝুঁকির মধ্যে ব্যাংক খোলা রাখা হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে এখন জরুরী সেবা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যাংকারদের মনোবল ধরে রাখতে হবে। সো-কলড ডাউন কাজে আসছে না। আমরা লত-ডাউন মানছি না।

নাসির এজাজ বিজয় বলেন, ব্যাংকের সবচেয়ে বড় স্টেক হোল্ডার আমানতকারীদের দিকটি দেখতে হবে। তারা টিকে থাকলে ব্যাংক ঋণ দিতে পারবে। আমানত কমে গেলে ব্যাংক ঋণ দিবে কিভাবে। ব্যাংককে টিকে থাকতে হলে একটি পরিকল্পনা অবশ্যই থাকতে হবে। ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে অর্থনীতির সব খাত জড়িয়ে পড়ছে। এজন্য ব্যাংক সমস্যায় পড়লে সব খাত সমস্যায় পড়বে।

প্রতিবেদনে ১০টি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে একশন প্লান করার সুপারিশ করা হয়। ব্যাংকিং খাতের পুনরুদ্ধারে একটি প্রস্তাবনা দেয়া হয়।

প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে; সম্ভ্যাব্য ঝুঁকির বিষয়গুলো চিহ্নিত করা, সম্ভ্যাব্য অবকাঠামোগত পরিবর্তনে প্রস্তুতি নেয়া, ঋণ ব্যবস্থাপনার ঝুঁকির দিকগুলোর পদ্ধতি সংস্কার আনা, বর্তমান ও সম্ভ্যব্য তারল্য ব্যবস্থাপনার দিকগুলো রিভিউ করা, প্রনোদণার প্যাকেজগুলোর সর্বোচ্চ সুষ্টু ব্যবহার, অর্থনীতিতে তারল্য বাড়াতে বিনিয়োগ পরিকল্পনা নেয়া, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সকল কাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখা, প্রতিষ্টানের সুনাম ও অর্থনৈতিক ঝুঁকির বিষয়ে দেখভাল করা, সকল পর্যায়ে শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্টা করা এবং আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি কাজ করা।