Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 2:53 pm

কর্মকর্তাদের না জানিয়ে সচিব নিয়োগে স্বতন্ত্র পরিচালকের উদ্যোগ

আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে কোম্পানি সচিব নিয়োগ দিতে কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ মাসুম ইকবাল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন জানিয়েছেন। এজন্য একজনকে মনোনীত করে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়া-উল-ইসলাম বরাবর আবেদন করেছেন তিনি।

কিছুদিন আগে কোম্পানিটিতে দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের মধ্যে একজন হলেন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন ও এন্টারপ্রেনারশিপ বিভাগের অধ্যাপক ও ডিন মোহাম্মদ মাসুম ইকবাল। তিনি সম্প্রতি কোম্পানি সচিব নিয়োগের বিষয়ে বিএসইসিতে একটি আবেদন জমা দিয়েছেন। অথচ এ বিষয়ে কোম্পানিটির বর্তমান কর্মকর্তারা কেউ কিছু জানেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, ‘গত ৭ নভেম্বর থেকে আমাদের দুজনকে ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরিচালনা পর্ষদ এখনও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। পরে আমরা কোম্পানির রেজিস্ট্রারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সন্ধান পাইনি। এই পরিস্থিতিতে একজন কোম্পানি সচিব নিয়োগ করা প্রয়োজন। কারণ সচিব ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করা যায় না। তাই আমি অহিদুজ্জামান সাহিনকে ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কোম্পানি সচিব পদে নিয়োগের জন্য অনুরোধ করছি। আমি বিএসইসিকে ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে জানতে বর্তমানে দায়িত্বরত ইমাম বাটনের কোম্পানি সচিব আরবিন্দ নাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, স্বতন্ত্র পরিচালক যে বিষয়ে আবেদন জানিয়েছেন, সে বিষয়ে পর্ষদ বা কোম্পানির কোনো কর্মকর্তার জানা নেই। বিষয়টি আমিও জানি না।

এদিকে আবেদনকারী কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ মাসুম ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলে জানানো হয় সেটি ‘রং নাম্বার’।

ঋণে জর্জরিত ও দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকা এবং ১২ বছর লভ্যাংশ না দেয়া ও ৪ বছর এজিএম না করায় দেশের পুঁজিবাজারের ‘জেড’ ক্যাটাগরির তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইমাম বাটনে সম্প্রতি দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় বিএসইসি। নিয়োগকৃত স্বতন্ত্র পরিচালকরা হলেনÑমাহমুদ সবুজ অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা অংশীদার ও আইসিএবির কাউন্সিল সদস্য মো. মাহমুদুল হোসেইন এবং ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অনুষদের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাসুম ইকবাল।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি; যা ১৯৯৬ সালে আইপিও’র মাধ্যমে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটি ২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বার্ষিক সাধারণ সভা করেনি এবং ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। এছাড়া কোম্পানিটি ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে কমিশনে নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন এবং ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং একইভাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (তালিকাকরণ) প্রবিধান-২০১৫-এর ১৭ ও ১৮ ধারা লঙ্ঘন করেছে।

কোম্পানিটিকে ২০১১ সালে স্টক এক্সচেঞ্জে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে রাখা হয়েছিল। সেই সঙ্গে কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে স্থাপনের প্রথম দিন থেকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তার পরিচালনা পর্ষদের পুনর্গঠন করতে ব্যর্থ হয়। তাই গত ২৪ আগস্ট বিএসইসি এবং ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে দুজন নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কমিশন ২০২১ সালের ২২ মার্চের নির্দেশনার অধীনে প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে কোম্পানিতে উল্লিখিত দুই ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ করে। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

ইমাম বাটনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী। তিনি চট্টগ্রামভিত্তিক ইমাম গ্রুপের মালিক। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ৮০০ কোটি টাকার ঋণখেলাপির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা ৫৫টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যান।

মোহাম্মদ আলী একসময় ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এনসিসি) পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। এই পদ ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। পরে তাকে এনসিসি বোর্ড থেকে বাদ দেয়া হয় এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ খেলাপি হয়ে যায়।

ইমাম বাটন ২০১১ সাল থেকে লোকসান করে আসছে। বর্তমানে ডিএসইতে ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানি হিসেবে রয়েছে। কোম্পানিটি ১৯৯৬ সালে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। এর পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কোম্পানির উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের কাছে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে ৬০ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।