Print Date & Time : 4 August 2025 Monday 11:09 pm

কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্যোগ কাম্য

প্রতি বছর পড়ালেখা শেষ করে বের হন লাখ লাখ তরুণ। তাদের একটি বড় অংশ এখন কর্মহীন। রাষ্ট্র সবার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে না। এ অবস্থায় কর্মসংস্থান সম্পর্কে প্রচলিত চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে অভিভাবক, শিক্ষক ও তরুণদের নতুন করে ভাবতে হবে। চাকরি করার জন্য নয়, বরং নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠান তৈরি করা গেলে অনেকের কর্মের সংস্থান করা সম্ভব।

গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, করোনায় কপাল পুড়েছে লাখো উচ্চশিক্ষিতের। এতে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় আছেন যাদের বয়স সদ্য ৩০ বছর পেরিয়েছে বা ৩০ বছর ছুঁইছুঁই করছে।

আমরা মনে করি, চাকরিতে প্রবেশসীমা বাড়িয়ে হলেও রাষ্ট্র তরুণদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করবে। তবে চাকরি করার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। সবাই যে চাকরি পাবে, সেটিরও নিশ্চয়তা নেই। অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের চেষ্টায় কিছু করার মানসিকতা অর্জন করতে হবে। এখন দেশে চাকরি দেয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন তরুণদের বেশি প্রয়োজন। দেশের তরুণদের চাকরিজীবী নয়, উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

বৈধ উপায়ে যে কোনো উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করার উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে হবে। হোক না তা ছোট কাজ, আস্তে আসতে বড় হতে হবে। বাইক চালিয়ে, টিউশনি করে বা খণ্ডকালীন কাজ করে অন্তত আত্মনির্ভরশীল হয়ে টিকে থাকতে হবে। ভালো কিছু করার সুযোগ খুঁজতে হবে। সরকারের উচিত নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি করা। রাষ্ট্রের পক্ষে সবাইকে চাকরি দয়া সম্ভব নয়। তাই আত্মকর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে। উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ পুঁজি ও নীতি সহায়তা দিতে হবে। ব্যাংকঋণ প্রাপ্তি সহজ করতে হবে। কম সুদে ঋণ দিতে হবে। আয়বর্ধক যেকোনো কাজে তরুণদের সম্পৃক্ত করা দরকার। কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণে তরুণ বলতে শুধু শহরের শিক্ষিত তরুণ নয়, গ্রামের শিক্ষিত-প্রশিক্ষিতদেরও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে হবে। কভিডকালে কিছু আশাব্যঞ্জক খবর গণমাধ্যমে এসেছে। যেমন চাকরি ছেড়ে খামারি, পুঁজি ছাড়া গরু পালন, ঘরে বসেই তিনি এখন ব্যবসায়ী।

জনগোষ্ঠীর বড় অংশ বিশেষ করে সক্ষম সবল অংশকে কোনোভাবেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে রেখে এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট) অর্জন সম্ভব নয়। তরুণদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত বলে আমরা আশা করি।

তরুণরা যেন যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, পারিশ্রমিক ও সম্মান পেলে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তখন তারা নিজেরাই উদ্যোগী হবে নতুন কিছু করার। কারিগরি শিক্ষায় তরুণদের শিক্ষিত করা গেলে তারা বসে থাকবে না। কভিডকালে দেশে বেকারত্ব বেড়েছে। অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে থাকা তরুণরা কাজ হারিয়েছে কিংবা ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। প্রণোদনা, পুঁজির সংস্থান করা গেলে এরা উদ্যোক্তা হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে। কাজ হারিয়ে শহর থেকে যেসব তরুণ গ্রামে ফিরে গেছেন, তাদের খামার-বহির্ভূত কৃষি ও কৃষিভিত্তিক ব্যবসায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য মূলধনের পাশাপাশি বিপণন ও সাপ্লাই চেইনকে সুসংহত করা প্রয়োজন। কভিডকালে ওয়েব সার্ভিস, গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো প্রযুক্তি সেবার চাহিদা বেড়েছে। ইন্টারনেট সুলভ হওয়ায় এ সেবা যে কোনো জায়গায় বসে দেয়া সম্ভব। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।