পাবলিক অডিট বিলের খসড়ার সমালোচনায় টিআইবি

কর-জিডিপি অনুপাত উদ্বেগজনক বড় কারণ যোগসাজশের কর ফাঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাবলিক অডিট বিল-২০২৪ এর খসড়ার সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ধারা-৭ এ রাজস্ব নিরূপণের যথার্থতা নিরীক্ষার সুযোগ না রাখার ফলে সরকারি রাজস্ব নিরূপণ ও আদায়সংক্রান্ত বিষয় জবাবদিহির বাইরে থেকে যাবে। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এ কথা বলেন।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে কর ফাঁকির অন্যতম উপায় কর কর্মকর্তাদের একাংশের সঙ্গে অসাধু করদাতাদের যোগসাজশের মাধ্যমে প্রতারণামূলক রাজস্ব নিরূপণ, যার অসংখ্য দৃষ্টান্ত বিভিন্ন সময় অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাতের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির অন্যতম কারণ হলো যোগসাজশের কর ফাঁকি। এ থেকে উত্তরণের জন্য রাজস্ব নিরূপণ নিরীক্ষাভুক্ত করা অপরিহার্য’। অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের অনৈতিক চাহিদা বা চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে এ বিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এমন আশা করেন তিনি।

পাবলিক অডিট বিল-২০২৪ এর খসড়ায় রাজস্ব নিরূপণ ও আদায়ের নিরীক্ষা এবং সিএজি কার্যালয়ের প্রাধান্য ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সুপারিশ করেছে টিআইবি। টিআইবির পক্ষ থেকে সুপারিশমালা অন্তর্বর্তী সরকারের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করা হয়। টিআইবির সুপারিশ মূলত রাজস্ব ও প্রাপ্তির নিরীক্ষার এখতিয়ার; নিরীক্ষাধীন সব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর দায় ও জবাবদিহি; সিএজির নিজস্ব জনবল নিয়োগের এখতিয়ার এবং বিধি প্রণয়নের ওপর। ‘অর্থ মন্ত্রণালয়সহ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান, একটি দাতা সংস্থা এবং বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের মধ্যে আবদ্ধ অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়’ পাবলিক অডিট বিল-২০২৪ এর খসড়া চূড়ান্ত করার উদ্যোগের সমালোচনা করে ‘জনস্বার্থে’ সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়ার জন্য গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিলটি উš§ুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছিল টিআইবি।
এরপর খসড়া অধ্যাদেশটি টিআইবির হাতে আসে এবং তার ওপর টিআইবি পাঁচটি সুপারিশ করছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
সরকারের প্রাপ্য সব রাজস্ব ও প্রাপ্তি আইন, বিধি এবং পদ্ধতি অনুযায়ী যথাযথভাবে নিরূপণ ও আদায় এবং সঠিকভাবে জমা এবং হিসাবভুক্ত হয়েছে কি-না, তা যাতে মহাহিসাব নিরীক্ষক অডিট করতে পারেন, সেজন্য একটি বিধান যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে টিআইবির সুপারিশে।
তাছাড়া নিরীক্ষাধীন প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রদানসহ সার্বিক সহযোগিতা ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা যাতে দায়বদ্ধ থাকেন, তা নিশ্চিতের সুপারিশ করা হয়েছে।

মহাহিসাব নিরীক্ষক গঠিত স্বতন্ত্র তদারকি কমিটিতে সংশ্লিষ্ট খাতের নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছে টিআইবি। সুপারিশে বলা হয়েছে, এই স্বতন্ত্র তদারকি কমিটি জাতীয় সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিকে প্রতিবেদন দেবে এবং তা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। টিআইবি এমন বিধান চায়, যাতে মহাহিসাব নিরীক্ষক তার কার্যালয়ের সব জনবল নিয়োগ দিতে পারেন এবং এ অফিস নিজস্ব মানবসম্পদ নীতিমালা অনুসারে পরিচালিত হয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে রাজস্ব নিরূপণের যথার্থতা নিরীক্ষার সুযোগ না রাখার ফলে পুরো সরকারি রাজস্ব নিরূপণ ও আদায় সংক্রান্ত বিষয় জবাবদিহির বাইরে থেকে যাবে।” উচ্চ আদালতের সংশ্লিষ্ট রায়, সংশ্লিষ্ট আইন ও আন্তর্জাতিক চর্চার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কর ফাঁকির অন্যতম উপায় কর কর্মকর্তাদের একাংশের সঙ্গে অসাধু করদাতাদের যোগসাজশের মাধ্যমে প্রতারণামূলক রাজস্ব নিরূপণ, যার অসংখ্য দৃষ্টান্ত বিভিন্ন সময়ে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রকাশিত হয়েছে। যা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে, বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাতের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির অন্যতম কারণ যোগসাজশের করফাঁকি।

এ থেকে উত্তরণের জন্য রাজস্ব নিরূপণ নিরীক্ষাভুক্ত করা অপরিহার্য। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো ধরনের অনৈতিক চাহিদা বা চাপের প্রতি নতি স্বীকার না করে এ বিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।