জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: কর বৃদ্ধি করে কিংবা তামাক চাষ বন্ধ করে সিগারেটমুক্ত সমাজ গড়া যাবে না। ধূমপান বা তামাকের ব্যবহার কমাতে ইনোভেটিভ আইডিয়া বের করতে হবে বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম। গতকাল বুধবার রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাক পণ্যের কার্যকর কর ও মূল্য বৃদ্ধিবিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, তামাকবিরোধী যত সংগঠন রয়েছে, সবার নজর দেয়া উচিত সামাজিক সচেতনতার ওপর। বর্তমান নারী ধূমপায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশের বড় একটি কোম্পানি সম্প্রতি নতুন একটি ব্রান্ডই এনেছেন নারীদের জন্য। বর্তমানে নারী ও পুরুষ সকল ক্ষেত্রে ধূমপান বেড়েছে। তিনি বলেন, কর বৃদ্ধি করে কিংবা তামাক চাষ বন্ধ করে সিগারেটমুক্ত সমাজ গড়া যাবে না। ধূমপান বা তামাকের ব্যবহার কমাতে ইনোভেটিভ আইডিয়া বের করতে হবে। ট্যাক্স বাড়িয়ে দিলে সিগারেটের ব্যবহার কমে যাবে। এজন্য গত ২০ বছর ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চাপ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই ধারণা কাজ করছে না। হুট করে সিগারেট ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয়।
প্রেস সচিব বলেন বলেন, তামাকবিরোধী কার্যক্রমে সব সংস্থা ব্যর্থ হয়েছে। দেশকে তামাকমুক্ত করতে নতুন ধারণা দরকার। এজন্য সবাই সচেতন থেকে দেশব্যাপী প্রচারণা চালাতে পারলে সিগারেট ব্যবহারে আমূল পরিবর্তন আসতে পারে। উত্তম বিকল্প না ভেবে তামাকচাষিদের তামাক উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করা সম্ভব নয় বলেও জানান প্রেস সচিব।
ইকোনমিক রিপোর্টারস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি দৌলত আকতার মালা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডরূপ-এর উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (মূসক নীতি) ড. মো. আবদুর রউফ, বিসিআইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও লিড পলিসি অ্যাডভাইজার, সিটিএফকে বাংলাদেশ মো. মোস্তাফিজুর রহমান, টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রজেক্ট ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন অব দি রুরাল পুয়রের (ডরূপ) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এএইচএম নোমান। কর্মশালায় বলা হয়, সর্বশেষ তিন অর্থবছরে জটিল মাল্টি-টায়ার্ড অ্যাড ভ্যালোরেম কর ব্যবস্থার কারণে সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্য নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধি তুলনায় তা নগণ্য। এতে গড়ে সিগারেট বিক্রি বেড়েছে বছরে ৪৭ শতাংশ হারে। চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে সব স্তরের সিগারেটর ওপর সমান ৬৭ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নি¤œ এবং মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রস্তাবিত নতুন স্তরে সিগারেটের প্রতি শলাকার দাম ন্যূনতম ৯ টাকা করতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশে সিগারেট ব্যবহারের হার কাক্ষিত মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না।
সভায় স্বাগত বক্তব্যে ইকোনমিক রিপোর্টারস ফোরামের সভাপতি দৌলত আকতার মালা বলেন, সর্বশেষ পাঁচ অর্থবছরে তামাকবিরোধী নাগরিক সংগঠনের প্রস্তাবমতে, কার্যকর করারোপ করা গেলে অন্তত ১১ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি রাজস্ব আয় করা সম্ভব হতো। তাই প্রস্তাবনা অনুসারে সিগারেটের দাম বাড়ানো গেলে সিগারেটের ওপর বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক হার (৬৭ শতাংশ) অপরিবর্তিত রেখেই আগামী অর্থবছরে চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪৩ শতাংশ বেশি রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব। তবে গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক থেকে যে রাজস্ব পেয়েছিল তার চেয়ে ৩৪৭। বেশি টাকা তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছিল।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধে ডরূপ-এর উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাজারে নি¤œ, মধ্যম, উচ্চ ও অতি উচ্চÑএই চার স্তরের সিগারেট বিক্রি হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের এই দামবৃদ্ধির পরও সবচেয়ে সস্তা সিগারেটের একটি শলাকা ছয় টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিগারেটের সহজলভ্যতা কমাতে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম অন্তত ৯ টাকা ধার্য করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সিগারেট বিক্রির সিংহভাগ প্রায় ৯০ শতাংশ নি¤œ এবং মধ্যম স্তরের দখলে রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মাথাপিছু সিগারেট বিক্রি বিগত বছরগুলোয় প্রায় একই রকম থাকলেও এই দুই স্তরে সিগারেট বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। আসন্ন অর্থবছরে নি¤œ ও মধ্যমÑএই দুটি স্তরকে একত্র করে এই নতুন তিন স্তরের সিগারেটের দশ-শলাকার একেকটির দাম যথাক্রমে ৯০ টাকা, ১৪০ টাকা ও ১৯০ টাকা ধার্য করতে হবে। এই প্রস্তাবনা আগামী বাজেটে প্রতিফলিত করা গেলে প্রায় ১৭ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে এবং
দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৮ লাখ ৭০ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ডরূপ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এএইচএম নোমান। তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে তামাকপণ্যে কর বৃদ্ধি ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত সিগারেট কর সংস্কার একটি সুস্থ জাতি গঠনে অবদান রাখার পাশাপাশি দেশের দেশের স্বাস্থ্য খাত ও উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলোয় অর্থায়ন এবং টেকসই কর ব্যবস্থার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অতিরিক্ত অর্থের জোগান দেবে।