কর ব্যবস্থায় ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করুন

দেশকে এগিয়ে নিতে শিল্পায়নের বিকল্প নেই। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণে নানা উদ্যোগ নিতে হয়। আমরাও নিয়েছি। এর উল্লেখযোগ্য হলো কর অবকাশ, দ্রুত সেবা সংযোগ প্রাপ্তি, সরকারি দপ্তরের সেবা নিতে হয়রানি কমানো, এক দরজায় সব সেবা দেয়া প্রভৃতি। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যাস, পানিসহ সব ধরনের সুবিধা রয়েছে। রয়েছে দীর্ঘমেয়াদে কর অবকাশ সুবিধা।
আধুনিক যুগে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সব শিল্পই বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। তাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুযোগ ও ছাড় দিয়ে আসছে।
গতকাল শেয়ার বিজ কড়চায় প্রধান প্রতিবেদন ছিল, ‘২০৩৬ পর্যন্ত কর দিতে হবে না বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে’। প্রতিবেদনের ভাষ্য: কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর অব্যাহতির সুবিধার বাইরে থাকছে। আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে উৎপাদনে এলেই শতভাগ কর অব্যাহতি পাওয়া যাবে। ২০২৪ সালের ৩০ জুনের পর উৎপাদন শুরু করলে ৫ বছর কর ছাড় এবং বিদেশি ঋণের পুরো সুদ ও বিদেশি কর্মীদের আয়ের ওপর ৩ বছরের কর অব্যাহতি। তাছাড়া নতুন ও পুরোনো সব বিদ্যুৎকেন্দ্রই পাচ্ছে কর অব্যাহতির বিশেষ ছাড়। বিদ্যুৎ খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত বড় তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে সুবিধা দিতেই এ বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছে।
ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল) চালু রাখতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ লোকসান দিচ্ছেÑএ অভিযোগ পুরোনো। তীব্র বিদ্যুৎ সংকট মেটাতে তেলচালিত ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে হয়েছিল। জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত এসব কেন্দ্র বিদ্যুৎ সংকট মিটিয়েছে অনেকখানি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনেও কিছুটা সহায়ক হয়েছে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে দিতে হয়েছে বড় মূল্য। এ অবস্থায় কোনো প্রতিষ্ঠানকে অযৌক্তিক কর সুবিধা দেয়া উচিত নয় বলেই আমরা মনে করি।
এর আগেও তিন দফায় বিদ্যুৎ খাতে কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। সুবিধা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। সরকার দীর্ঘমেয়াদে ক্যাপাসিটি চার্জ দেবে, এমনকি অলস বসে থাকলেও; তাই নতুন করে সুবিধা দেয়ার খবর সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেবে না। শেষ বিচারে এর মাশুল দিতে হয় তাদেরই। ২০৩৬ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন যেসব কোম্পানিকে একবার ১৫ বছরের জন্য কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, সেগুলোকে নতুন করে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেয়া অনৈতিক। কারণ এতে পুরোনো কেন্দ্রগুলো বাড়তি সুবিধা পেয়ে যাবে। এছাড়া পুরোনো কেন্দ্রগুলোকে নতুন করে কর অব্যাহতি দেয়ার ফলে দীর্ঘমেয়াদে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বারবার সুযোগ পাবে অথচ জনগণ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবে না, এটি ন্যায্যতা নয়। সরকারের উচিত হবে কর ব্যবস্থায় ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা।