Print Date & Time : 13 September 2025 Saturday 6:35 pm

কাঁচা মরিচের কেজি ১০০০ টাকা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: কাঁচা মরিচের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। ঈদের আগে নিত্য প্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম ছিল ৪০০ টাকা। তবে ঈদের পরের দুইদিনে তা কয়েক দফা বেড়ে এক হাজার টাকা ছুঁয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে এ তথ্য এসেছে। তবে ঢাকাসহ কিছু জেলায় ৬০০-৮০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ।

প্রতিনিধি জানান, সিলেটের খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইকারি বাজারে কেজিতে ৬০০-৭০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে কাঁচা মরিচ। হঠাৎ কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।

সিলেটের বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সপ্তাহখানেক ধরে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে ঈদের পরের দিন থেকে খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ১ হাজার টাকায় পৌঁছায়। ১০ দিন আগেও ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হয়েছিল। এরপর দাম বাড়তে শুরু করে। এ কারণে ক্রেতারা কাঁচা মরিচ কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।

আগে যেখানে ক্রেতারা কেজি পরিমাণে কিনতেন, সেখানে ২০০ গ্রাম কিংবা ১০০ গ্রাম কিনছেন এখন। এ ছাড়া ভাসমান সবজির ব্যবসায়ীরা ৫০ গ্রাম থেকে ২০ গ্রাম করেও কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন।

নগরের জল্লারপাড় এলাকায় ভাসমান সবজি ব্যবসায়ী কয়েছ মিয়া বলেন, পাইকারি বাজার থেকে এনে তাঁরা বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও ফুটপাতে সবজি বিক্রি করেন। কাঁচা মরিচের কেজি তিনি ১০০০ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে আগে ক্রেতারা আধা কেজি পরিমাণে কিনলেও এখন কেউ ১০-২০ গ্রাম আবার কেউ ১০০ গ্রাম কিনছেন।

বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে গিয়ে দাম শুনে হতভম্ব হয়েছেন জানিয়ে ভাতালিয়া এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, এক সপ্তাহ আগেও এক কেজি কাঁচা মরিচ তিনি নিয়ে গেছেন ১৫০ টাকায়। কিন্তু এখন হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০০ গ্রাম কিনেছেন। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে, কোরবানির বাজারকে টার্গেট করে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করছেন। প্রতিবছর রোজার ঈদে কাঁচা মরিচসহ অন্যান্য সবজির দাম বাড়ে। কিন্তু এবার বেড়েছে কোরবানির ঈদে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাঁচা মরিচ সিলেটে চাষাবাদ হয় না। এখানকার বাজারে যে কাঁচা মরিচ পাওয়া যায়, সবই সিলেটের বাইরে থেকে আড়তে নিয়ে আসা হয়। বেশির ভাগ মরিচ আসে বগুড়া থেকে। বর্তমানে সেখানে দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে সিলেটের বাজারে।

ঝিনাইদহেরশৈলকুপা বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ইউনুস আলী জানান, তিনি প্রতিদিন ২ থেকে ৩ মণ কাঁচামরিচ বিক্রি করেন। শনিবার তিনি ১০ কেজিও মরিচ কিনতে পারেননি। যা পেয়েছেন, তা এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। 

শনিবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে সকালে দাম ছিল প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। ঈদের আগে প্রতি কেজির দাম ছিল ৪০০ টাকা। এরপর দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়তে থাকে। আবার একই দিন ৭ কিলোমিটার দূরে গাড়াগঞ্জ বাজারে প্রতি কেজি ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

হাটের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, সকাল ৮টার দিকে হাট শুরু হলে চাষিরা পাইকারি প্রতি কেজি বিক্রি করছিল ৭০০ টাকা। এরপর পাইকারি বাজারে দাম বাড়তে থাকে। 

৯টার সময় কথা হয় গোবিন্দপুর গ্রামের চাষি আদালাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার ১০ কাঠা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। মরিচ কম ধরছে। ফুল পচে যাচ্ছে। শনিবার ২ কেজি মরিচ হাটে এনেছেন। ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন তিনি। 

খুচরা বিক্রেতা মজিবর রহমান প্রতি কেজি এক হাজার টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে গেছে। এজন্য খুচরা বাজারেও দাম বেড়ে গেছে।’ 

ক্রেতা আজিজুর রহমান বলেন, ‘শনিবার সকালে কাঁচামরিচ কিনতে এসে তো আকাশ থেকে পড়া অবস্থা। এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম এক হাজার টাকা। বাধ্য হয়ে শুকনো মরিচ কিনে বাড়ি যাচ্ছি।’

আরেক ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কাঁচামরিচের এতো দাম জীবনে দেখিলি। এক হাজার টাকার এক পয়সা কমেও কাঁচামরিচ পাওয়া যাচ্ছে না। এক কেজি কাঁচামরিচে এখন এক কেজি খাসির মাংস পাওয়া যাচ্ছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এক হাজার ৭৩৭ হেক্টরে মরিচ চাষ হয়েছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহের উপ পরিচালক মো. আজগর আলি বলেন, ‘আগে তাপ প্রবাহের কারণে মরিচের উৎপাদন কম হয়। বর্তমানে বৃষ্টির কারণে ফুল ও ফল নষ্ট হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়ায় হঠাৎ করেই কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯জুন) ঈদের দিনই সকালে পৌরশহরের সড়ক বাজারে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।

পৌর শহরের রাধানগর গ্রামের ঘোষ পাড়ার মতিলাল ঘোষ জানান, সকালে সারা বাজার ঘুরেও কাঁচা মরিচ পায়নি। এক দোকানে মরিচ পেলেও বিক্রেতা ১০০০ হাজর টাকা কেজি দাম চায়। দাম শুনে আমার মাথায় যেন বাজ পড়ে। কাঁচা মরিচ তো লাগবে। পরে ৫০ টাকার মরিচ কিনে বাড়ি নিয়ে যায়।

কাঁচা বাজারে আসা মসজিদ পাড়ার নুরু মিয়া নামের এক ব্যক্তি জানান, ৪/৫ দিন আগেও বাজার থেকে ৪০০ টাকা দরে কাঁচা মরিচ কিনেছি। পরশু দিন ছিল ৮০০ টাকা। হঠাৎ করেই আজ বাজারে কাঁচা মরিচের দাম আরো বেড়ে যায়, যা এখন কেনার সাধ্যের বাইরে।

বাজারের খুচরা কাঁচামাল বিক্রেতা নিতাই ঘোষ জানান, সকালে বাজারের সব পাইকার ঘর ঘুরেও এক কেজি কাঁচা মরিচ কিনতে পারিনি। সরবরাহ না থাকার কারণেই বাজারে কাঁচা মরিচের দামের এই অস্থিরতা।

শান্তি সাহা নামের আরেক কাঁচামাল ব্যবসায়ি জানান, গত কয়েকদিন ধরেই বাজারে কাঁচা মরিচ নেই। কাঁচামাল আরতদাররা বলছে, যেখান থেকে( রাজশাহী) মরিচ আসে সেখানেই নাকি মরিচ নেই। মনে হচ্ছে ঈদের পরে দাম আরো বাড়বে। তবে ভারত থেকে আমদানি শুরু হলে দাম কমে আসবে।

সড়ক বাজারের কাঁচামাল বিক্রেতা ও আড়তদার হারাধন সাহা হারু বলেন, ঢাকা ও কুমিল্লার কোনো মোকামেই মরিচ নেই। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আমদানি শুরু হবে। তখন কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা দরে নেমে আসবে।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, গ্রীষ্মকালে মরিচের আবাদ এমনিতেই কম হয়। তার উপর টানা বৃষ্টির কারণে অনেক কৃষকের মরিচ খেত নষ্ট হয়ে গেছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ার কারণেই বাজারে এই অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে বলে আমি মনে করছি।