যে কোনো উদ্যোগের শুরুতে আসে অনেক বাধাবিপত্তি। এসব গায়ে না মেখে লেগে থাকলে সফল হওয়া যায়। যারা সফল হন, তাদের অনুসরণ করলে আরও নতুন উদ্যোগ শুরু হয়। নানা খাতের সেসব সফল উদ্যোক্তাকে নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজন
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার জামগ্রামের কুটিরশিল্পের ছোট-বড় কারিগররা নানা রঙ ও বাহারি নকশার কাগজ, কাপড় ও শোলা দিয়ে কৃত্রিম ফুল তৈরি করেন। এখানে গোলাপ, স্টার, সূর্যমুখী, কিরণমালা, মানিকচাঁদ, জবা, বিস্কুট, গাঁদাসহ বিভিন্ন নামের কাগজের ফুল তৈরি করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়নের অবহেলিত একটি জনপদ জামগ্রাম। নেই কোনো পাকা রাস্তা। বিদ্যুৎবিহীন। এখানকার তৈরি ফুল দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন উৎসব, ঈদ ও মেলায় পুরুষরা ফেরি করে বিক্রি করে। লাভ তুলনামূলকভাবে ভালো, কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে। গ্রামে ঢুকলে চোখে পড়ে বিভিন্ন স্থানে কয়েকজন মিলে করছে ফুল। সাধারণত ঈদ, পূজা, মেলা ও পয়লা বৈশাখে এসব ফুলের চাহিদা থাকে।
প্রায় ৫০ বছর আগে এই ফুল তৈরির কাজ শুরু হয়। এখন তা পুরো গ্রামের মানুষের বেঁচে থাকা ও আয়ের একমাত্র উৎসে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এই গ্রামের প্রায় ৭০০ পরিবার এই বাহারি ফুল তৈরি করার কাজে নিয়োজিত। সংসার দেখভাল করার পাশাপাশি নারী, পুরুষ ও ছোট-বড় সবাই এই ফুল তৈরি করে।
মো. হোসেন আলী জানান, এখনও বিদ্যুৎসেবা পাই না আমরা। তাই শত ইচ্ছা থাকলেও রাতে এই ফুল তৈরি করা যায় না। আমাদের এই শিল্পটিকে আরও গতিশীল করার জন্য প্রয়োজন আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ। মোছাম্মত রুখসানা আখতার জানান, সংসারের সব কাজ সম্পন্ন করে পরিবারের পুরুষদের এই ফুল তৈরিতে সাহায্য করি। আমাদের গ্রামটিকে আধুনিক মানসম্মত গ্রামে পরিণত করা প্রয়োজন। মো. জনি ইসলাম জানান, ফুল তৈরিতে পরিবারের গৃহিণীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে আসছে। তাই মাস শেষে লাভের বেশিরভাগই দিতে হয় তাদের। সরকার যদি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য বিনা সুদে ঋণ দেয় তাহলে এই কুটিরশিল্পটি আগামীতে আরও বেশি সম্প্রসারিত হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম বলেন, এটি একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প। এর কদর রয়েছে সারা দেশে। শৌখিন মানুষ ও শিশুদের কাছে এই বাহারি কৃত্রিম ফুলগুলোর চাহিদা রয়েছে। এই গ্রামের মানুষদের আর্থিকভাবে সহায়তা করা গেলে তারা এই শিল্পটিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারবে। ফলে সরকার এই শিল্প থেকে অনেক অর্থ রাজস্ব হিসেবে আয় করতে পারবে। এসব কারিগরের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।
কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ