ইমাম হোসেন, মীরসরাই (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অকেজো পড়ে রয়েছে ইউনিয়ন কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড ও রেইনগজ মিটার। বোর্ড ও মিটার স্থাপন করেই দায় সেরেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই উপজেলা কৃষি অফিস ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের। নিয়মানুযায়ী কৃষিভিত্তিক আবহাওয়ার নানা তথ্য বোর্ডে হালনাগাদ থাকার কথা থাকলেও উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন পরিষদে লাগানো বোর্ডগুলো অচল হয়ে পড়ে রয়েছে।
মীরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশজুড়ে ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্যপদ্ধতি উন্নতীকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপজেলায় চার হাজার ৫১টি ইউনিয়নে স্বয়ংক্রিয় রেইনগজ ও কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। কৃষি আবহাওয়া-বিষয়ক নির্ভরযোগ্য তথ্য কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দিতে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো মীরসরাইয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছিল কৃষি আবহাওয়ার তথ্য বোর্ড। বোর্ডে রয়েছে তিন দিন আগের ও তিন দিন পরের কৃষিভিত্তিক আবহাওয়ার হালনাগাদ তথ্যের নানা ছক। আর ভবনের ছাদে বসানো হয়েছে রেইনগজ মিটার ও সৌর বিদ্যুতের প্যানেল। কিন্তু এসব কোনো কাজে আসছে না কৃষকদের। ব্যবহার না থাকায় অকেজো হয়ে পড়েছে তথ্য সব যন্ত্রপাতি।
প্রকল্পের আওতায় সে সময় মীরসরাইয়ের ১৬টি ইউনিয়নের প্রতিটি ইউপি ভবনের ছাদে স্থাপন করা হয়েছিল স্বয়ংক্রিয় রেইনগজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল। আর ইউপি ভবনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছিল আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার তথ্য বোর্ড। এই বোর্ডের মাধ্যমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, ঝড়ের পূর্বাভাস, আলোক ঘণ্টাসহ ১০টি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তা প্রকাশের ব্যবস্থা রয়েছে। এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মাঠপর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, আগের ও পরের তিন দিনের কৃষিভিত্তিক আবহাওয়ার নানা তথ্য এই বোর্ডে হালনাগাদ থাকার কথা থাকলেও সরেজমিনে গিয়ে সেসব বোর্ডে কোনো হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়নি। বোর্ডে যন্ত্রাংশ অচল হয়ে পড়ে আছে।
উপজেলার ১৩নং মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের গিয়ে দেখা গেছে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার তথ্য বোর্ডের বাইরে ও ভেতরে ময়লা জমে রয়েছে। মনে হচ্ছে বোর্ডটি লাগানোর পর আর কেউ বোর্ডে হাত দেয়নি। পরিষদে আসা লোকজনও জানেন না এটা কীসের বোর্ড, কেন লাগানো হয়েছে। ওপরে ছাদে গিয়ে রেইনগজ মিটারেরও একই অবস্থা চোখে পড়ে।
সাহেরখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ মঘাদিয়া এলাকার কৃষক শামসুল হক বলেন, মাঝেমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদে কোনো কাজে গেলে দেয়ালের সঙ্গে লাগানো একটি বোর্ড চোখে পড়ে। কিন্তু বোর্ডটি কী জন্য লাগানো হয়েছে তা জানি না।
মায়ানী ইউনিয়নের পশ্চিম মায়ানী এলাকার কৃষক মো. জসিম বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষকদের ফসল ফলানোর সুবিধার জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন অফিসে যে আবহাওয়ার তথ্য জানাতে বোর্ড লাগানো হয়েছে, সেটা তো আমরা জানতাম না। যদি এর মাধ্যমে আবহাওয়ার খোঁজ-খবর জানতাম, তাহলে জমিতে ফসল উৎপাদনে সহায়ক হিসেবে কাজ করত। এ বিষয়ে কৃষি অফিসাররাও কোনোদিন কিছু জানাননি।
কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড দায়িত্বরত এক কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আবহাওয়ার তথ্য বোর্ড ও রেইনগজ স্থাপনের পর নিয়মিত আবহাওয়ার তিন দিন আগের ও পরের পূর্বাভাস জানানো হতো। এটি ছয় মাস সচল ছিল। এরপর অকেজো হয়ে যায়। এখন বন্ধ রয়েছে। এটি অপারেট করতে আমাদের স্বল্প সময়ের একটি ট্রেনিংও দেয়া হয়। কিন্তু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, কৃষকদের ফসল ফলানোর সুবিধার্থে আবহাওয়ার আগের ও পরের তিন দিনের রোদ-বৃষ্টির পূর্বাভাস জানাতে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে তথ্য বোর্ড ও রেইনগজ মিটার রয়েছে। স্থাপনের পর কিছুদিন সচল থাকার পর তা নষ্ট হয়ে যায়। এরপর আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। বর্তমানে রেইনগজ মিটার ও তথ্য বোর্ডের ত্রুটির কারণে নিয়মিত তথ্য দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, যার ফলে কৃষকরা আবহাওয়ার তথ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, এগুলোর পরিবর্তে সরকার নতুন করে ডিজিটালাইজড মেশিন স্থাপন করবে। সেসময় পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।