এনামুল হক নাবিদ, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের আনোয়ারা পারকি সমুদ্র সৈকতে আটকে পড়া বিশাল আকারের মালবাহী এমভি ক্রিস্টাল গোল্ড জাহাজটি কাটা হচ্ছে। ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে নোঙর ছিঁড়ে পারকি সমুদ্র সৈকতে এসে আটকে পড়েছিলো জাহাজটি। তখন মালিক পক্ষ অনেক চেষ্টা করেও জাহাজটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে পারেনি। পরবর্তীতে ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান জাহাজটি ক্রয় করে। নানা আইনি জটিলতা ও পরিবেশ আইনের কারণে তৎকালীন সময়ে জাহাজ কাটার উপর পরিবেশ অধিদফতর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরবর্তীতে বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক দীর্ঘ আইনি পক্রিয়া শেষে বর্তমানে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে জাহাজটি কাটা শুরু করেছে ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ নামে এই প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্র সৈকতে আটকা পড়া জাহাজটির চারদিকে ব্যারিকেড দিয়ে জাহাজটি কাটা হচ্ছে। শনিবার থেকে জাহাজটি কাটা শুরু হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা। এসময় দায়িত্বে থাকা শীপ রিসালটেন্ট কনসালটেন্ট মোহাম্মদ মাহবুবের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে এ জাহাজটি কাটা হচ্ছে। হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল পরিবেশ বান্ধব উপায়ে জাহাজটি কাটার জন্য। হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক পরিবেশ বান্ধব উপায়ে জাহাজটি কাটার জন্য অনেকগুলি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করা হয়েছে সেটি হচ্ছে জাহাজের ৭০টি পয়েন্ট থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করেছি। জাহাজে বিপদজনক বর্জ্য, তেল ও ক্ষতিকারক ৪০ থেকে ৫০টি জিনিস থাকে যেগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সবগুলো থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করে স্যাম্পলগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য মালয়েশিয়ায় একটি ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। ল্যাবে স্যাম্পলগুলো পরীক্ষা করে দেখছে পরিবেশের জন্য মেজর যে ক্ষতিকারক জিনিসগুলো থাকে বর্তমানে সেগুলো রিমুভ হয়ে গেছে। কিছু জিনিস আছে রং। রংয়ের বাবরি চামড়াগুলো আমরা সংগ্রহ করে ড্রাম দিয়েছি যাতে রং না পড়ে। বিস্ফোরক অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সব ডিপার্টমেন্টে কিভাবে এ জাহাজটি কাটা হবে এবং জাহাজের বর্তমান অবস্থাটা কি সেই জিনিসগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরকে দেখানোর পরে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যেহেতু এটা পর্যটন স্পট সেজন্য আমাদেরকে বলা হয়েছে পর্যটকরা যাতে এরিয়ার ভিতরে আসতে না পারে এবং কোন দুর্ঘটনার যাতে সম্মুখীন না হয়। এজন্য আমরা আশেপাশে চারদিকে ব্যারিকেড দিয়ে প্রবেশ নিষেধ করা দিয়েছি যাতে পর্যটকরা নিরাপত্তায় থাকে।

তিনি আরও বলেন, এই জাহাজটা সৈকতে আটকে থাকার কারণে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে সৈকতে যে জোয়ার-ভাটার বালি আসে, ৪ বছর ধরে জাহাজটা আটকে থাকার কারণে বালি আসতে পারছে না। এই কারণে গাছের শিকড় থেকে বালি সরে যাচ্ছে ফলে সমস্ত গাছগাছালি আছড়ে পড়ছে এবং বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। আর এক বছর যদি জাহাজটা আটকে থাকে তাহলে বেড়িবাঁধ রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এই কারণে এটা পরিবেশ বান্ধব উপায়ে এখান থেকে রিমুভ করাটা পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য জাহাজের প্রতিটা জায়গা থেকে ৭০টা স্যাম্পল সংগ্রহ করেছি। কারণ কাটার সময় হঠাৎ করে কিছু একটা পরে গেলে পরিবেশের ক্ষতি হয়ে যাবে। জাহাজের বর্জ্যগুলি পরিষ্কারের করে ফেললে শুধুমাত্র স্টীলের পিলেট ছাড়া আর কিছু থাকবে না।
একটি পর্যটন এলাকায় জাহাজ কাটায় পরিবেশের উপর কোন প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে পরিবেশবাদী আইনজীবি এড. মঞ্জিল মোর্শেদ বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের যে শর্তগুলো রয়েছে সেগুলো মেনে যদি জাহাজটি কাটা হয় তাহলে পরিবেশের উপর তেমন একটা প্রভাব পড়বে বলে মনে হয়না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মফিদুল আলম বলেন, ২ কোটি টাকা জরিমানা পরিশোধ করায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে জাহাজটি কাটা হচ্ছে।