সা ক্ষা ৎ কা র

কাট্টলি টেক্সটাইলের উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুণ হবে

চট্টগ্রামভিত্তিক পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান কাট্টলি টেক্সটাইল লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমদাদুল হক চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য প্রতিষ্ঠান ডিএন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক; পাশাপাশি তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান। সম্প্রতি তার সঙ্গে পোশাকশিল্প খাতের ব্যবসা, চলমান অর্থনৈতিক সংকট, সম্ভাবনা ও কাট্টলি টেক্সটাইলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয়, যার কিছু অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো। আর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সাইফুল আলম

শেয়ার বিজ: আপনি পোশাকশিল্পের একজন উদ্যোক্তা, এ ছাড়া পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক। বর্তমানে পোশাকশিল্পের অবস্থা কেমন যাচ্ছে? এমদাদুল হক: ২০২০ সালের পর তো করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে দেশের পোশাকশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। এরপর ২০২৩ সালে দেশের ব্যাংক খাতে ডলার সংকটে এলসি ৫০ শতাংশ কমেছিল, যার প্রভাবে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তবে এখন পোশাক খাতের ব্যবসা অনেক ভালো হচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের শেষদিক থেকে দেশের পোশাক খাতে নতুন নতুন কার্যাদেশ আসছে। ফলে সব কোম্পানির বিক্রয় বেড়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) অঞ্চলের দেশগুলোর পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) অঞ্চলের শীর্ষ পোশাক সরবরাহকারী হওয়ায় বিশ্ববাজারে আরও বেশি রপ্তানির জন্য এ খাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ইইউয়ে শীর্ষ ডেনিম রপ্তানিকারক দেশ। এই অঞ্চলে প্রতি তিনজনের একজন বাংলাদেশে উৎপাদিত ডেনিম প্যান্ট পরেন। তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সাড়ে ৬৪ বিলিয়ন ডলারের ডেনিমের বিশ্ববাজারে আধিপত্য বিস্তারে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

শেয়ার বিজ: দেশের জ্বালানি সংকট, ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি ও ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির প্রভাব ব্যবসায় কেমন পড়েছে?
এমদাদুল হক: অর্থনীতি চার বছর ধরে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ৮৫ টাকার ডলার এখন ১২৩ টাকা। আবার ৯ শতাংশের সুদ এখন ১৫ শতাংশেরও বেশি। এ ছাড়া বিগত সরকার দফায় দফায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে, কিন্তু সরবরাহ বাড়াতে পারেনি। অথচ লুটপাটের শিকার হওয়া কিছু ব্যাংককে টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কিন্তু শিল্প টিকিয়ে রাখার দিকে সরকারের মনোযোগ নেই। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে চলতি মূলধন অর্ধেক কমে গেছে। এসব কারণে ব্যবসা অনেক চাপে আছে। এসব বিষয়ের দিকে বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নজর দিতে হবে।
শেয়ার বিজ: ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছিল আপনার কাট্টলি টেক্সটাইল লিমিটেড। সেই সময়ে ৩৪ কোটি টাকা সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে নেয়া হয়েছিল। এ টাকা দিয়ে কী কী কাজ করেছেন?
এমদাদুল হক: ব্যবসা সম্প্রাসরণের জন্য মূলত আইপিওতে আসা। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে ৩৪ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। এর মধ্যে কাট্টলি টেক্সটাইল লিমিটেডের শ্রমিকদের জন্য ডরমেটরি ভবন নির্মাণ, নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়, বিদ্যুৎ লাইন সঞ্চালন লাইন, ট্রান্সফামার ও জেনারেটর স্থাপন এবং ব্যাংকঋণ পরিশোধ করা হয়। সামনে নতুন একটি ১২ হাজার বর্গফুটের কারখানা ভবন নির্মাণের কাজও শুরু করা হবে। এর মধ্যে ডিজাইনের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া আমাদের আরেকটি কোম্পানি ইয়ার্ন অ্যাপারেলের সঙ্গে কাট্টলি টেক্সটাইলের মার্জারের বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। আর এগ্রো বেইজড একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। এর কাজও দ্রুত সময়ে শুরু হবে।
শেয়ার বিজ: কাট্টলি টেক্সটাইল লিমিটেডের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন?

এমদাদুল হক: আমরা ডিজনির ভালো কর্মপরিবেশ ও ওয়েলমার্টের গ্রিন রেটেড সনদপ্রাপ্ত কোম্পানি। বর্তমানে দেশের পোশাক খাতে আগের তুলনায় অনেক বেশি কার্যাদেশ আসছে। তাই আমরা সামনে নতুন ছয়তলার একটি ৭২ হাজার বর্গফুটের কারখানা ভবন নির্মাণের কাজও শুরু করব। এর মধ্যে ডিজাইনের কাজ শেষ হয়েছে। আর নতুন ভবন নির্মাণকাজ শেষ হলে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। এছাড়া আমাদের আরেকটি কোম্পানি ইয়ার্ন অ্যাপারেলের সঙ্গে কাট্টলি টেক্সটাইলের মার্জারের কাজ শুরু করব। এতে আমাদের কাট্টলি টেক্সটাইলের সম্পদও বহু গুণ বাড়বে। এ বিষয়ে বিএসইসি থেকে অনুমোদন নেয়ার জন্য কাজ করছি। আর পতেঙ্গা সাগরপাড়ের কাছে ১১৫ কাটা জমিতে এগ্রো বেইজড লাকি অরগানিকস লিমিটেড নামে কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। এর কাজও দ্রুত সময়ে শুরু হবে। এখানে বনজ গাছ লাগানো হচ্ছে। রিসোর্ট কাম রেস্টুরেন্ট করা হবে। ফলে এটি ভালো ইকো-ট্যুরিজমনির্ভর ব্যবসা হবে। আসলে কভিট ও ব্যাংক খাতের নানা জটিলতার কারণে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এখন কাজে মনোযোগী হতে হবে।
শেয়ার বিজ: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ?
এমদাদুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ। শেয়ার বিজের পাঠকদেরও ধন্যবাদ।