প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিরা। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আগের রূপে ফিরতে শুরু করেছে আমবাজার। গত শুক্রবার সকাল থেকেই জমে উঠেছে কানসাট আমবাজার। এখন আমে ভরপুর এই বাজার। ক্রেতাও আছে বেশ।
কানসাট বাজারে আম্রপালি আম বিক্রি করতে এসেছেন ইউনিয়নের আব্বাস বাজার এলাকার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে কমে গিয়েছিল আমের দাম। তাই আমরা গাছ থেকে তেমন আম নামাইনি। কিন্তু মাঠে সেনাবাহিনী নামার পরে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শান্ত। যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এতে আমাদের কানসাট বাজারেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। এখন আমরা স্বাভাবিকভাবেই আম বেচাকেনা করতে পারছি।
শ্যামপুর ইউনিয়নের আমচাষি আতাউর রহমান বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে আমের বাজারে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছিল, তা দূর হচ্ছে। গতকাল থেকে আগের রূপে ফিরতে শুরু করেছে এই আমবাজার।’
শহিদুল ইসলাম নামের আরেক আমচাষি বলেন, ‘সকাল থেকেই আম বাজারের চারপাশ আমে ভরপুর হয়ে উঠেছে। ক্রেতাদের আনাগোনাও বেশ। তবে বাজারে আগের মতো নগদ টাকায় লেনদেন হচ্ছে না।’
একই কথা বললেন আম ব্যবসায়ী আশরাফুল। তিনি বলেন, ‘বাজারে এখন ফজলি, আম্রপালি, বারি-৪, আশ্বিনাসহ নানা জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে। তবে কোটা আন্দোলন পরিস্থিতির আগে সব আম নগদে বিক্রি হচ্ছিল। এখন কিছুটা নগদ টাকার লেনদেন কমেছে।’
তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আড়তদাররা এখনও ঠিকঠাক নগদ টাকায় লেনদেন করছেন না। আব্দুল বাসির নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ছয়-সাত বছর আগে এই আমবাজারে নগদ টাকায় আম বেচাকেনা কম হতো। একপর্যায়ে ২০২১-২২ সালের দিকে আড়তদাররা অনেক আমচাষির বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন। তখন থেকে এই বাজারে আর কেউ বাকিতে আম বিক্রি করেন না। কিন্তু এখন পরিস্থিতির কারণে নগদ টাকার লেনদেন কমেছে।’
রহনপুর থেকে এক ভ্যান আশ্বিনা আম বিক্রি করতে এসেছিলেন রহমত আলী। তবে প্রত্যাশামাফিক দাম পাননি। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক হাজার ৭০০ টাকা মণদরে আম বিক্রি করে বাসায় যাচ্ছি। আন্দোলনের আগে যে দরে আম বিক্রি হচ্ছিল সেই দরেই আম বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এসময় আরও বেশি দামে আম বিক্রি হওয়ার কথা।’
কানসাট আম আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক বলেন, কোটা আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিল আমবাজারেও। সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছিল না আমভর্তি ট্রাক। আড়তদাররা ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে নগদ টাকা উত্তোলন করতে পারছিলেন না। এতে ভোগান্তিতে পড়েছিলেন আম-সংশ্লিষ্টরা। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। প্রতিদিন প্রায় ৫০০ আড়তে আম কেনাবেচা হচ্ছে। কাজ করছেন হাজারো শ্রমিক।
কনসাট আমবাজারে প্রতিদিন অন্তত ৩০-৩৫ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হয়। এবার জেলায় চার লাখ ৫০ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ, যা গতবছর ছিল চার লাখ ২৫ হাজার টন।