কার্যক্রমে স্থবিরতা, অধ্যাদেশ বাতিল চেয়ে এনবিআরে কলমবিরতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের উদ্দেশ্যে জারি করা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে রাজধানীসহ দেশের সব কাস্টম হাউস, শুল্ক স্টেশন, কর অঞ্চল ও ভ্যাট কমিশনারেট অফিসে তিন দিনের কলমবিরতি চলছে। কর্মসূচির প্রথম দিন গতকাল বুধবার আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে কার্যক্রম প্রায় অচল অবস্থায় ছিল। যদিও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত সময়েই অফিসে উপস্থিত হন, তবে কোনো দাপ্তরিক কার্যক্রমে তারা অংশ নেননি। প্রতিটি কক্ষের সামনে ‘কলমবিরতি চলছে’Ñএমন সাইনবোর্ড ঝুলতে দেখা গেছে, যার ফলে পুরো এনবিআর ভবনজুড়ে কার্যত স্থবিরতা বিরাজ করছে।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। সেখানে করদাতাদের উদ্দেশে জানানো হয়েছে-‘সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’ সকাল থেকেই সেবাপ্রত্যাশীরা অফিসে এলেও কাউকে কোনো সেবা দেয়া হয়নি।

আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, পরামর্শক কমিটির সুপারিশ এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত উপেক্ষা করে সোমবার রাতেই হঠাৎ করে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। তারা বলছেন, ‘আমরা খসড়া অধ্যাদেশ জারির পর থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছি। আমাদের দাবি, এই অধ্যাদেশ বাতিল করে পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দেশের কল্যাণে একটি নতুন অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হোক।’

তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাবি মেনে না নেয়া হলে কলমবিরতি কর্মসূচি চলবে এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর আন্দোলনের দিকে যাওয়া হবে। তারা আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি বিসিএস ট্যাক্সেস অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতিসহ কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। তারা ভিন্ন ক্যাডারের পক্ষে কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ চলছে। এরই মধ্যে ট্যাক্সেস অ্যাসোসিয়েশনের অন্তত ২০ জন নেতা পদত্যাগ করেছেন। আমাদের ন্যায্য দাবির বিপক্ষে যারাই কথা বলবেন, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না’।

এর আগে গত মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে এনবিআরের সামনে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই কলমবিরতির ঘোষণা দেন। সেইসঙ্গে দাবি আদায় না হলে ১৭ মে নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও জানানো হয়।

কাস্টমস ও ভ্যাটের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুন্ডু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অধ্যাদেশটি জারি হয়েছে। এই সংস্কারে সরকার যে কমিটি করেছে, সেখানে দেশের যোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। কিন্তু সেই কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি। প্রত্যাশী সংস্থা হিসেবে আমরাও জানতে পারিনি। ভালো-মন্দ কিছুই জানতে পারিনি। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। সবার মতামত উপেক্ষা করে অনেকটা গোপনীয়ভাবে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়েছে, যা অন্য অধ্যাদেশের মতো নয়। আমরা চাই, অধ্যাদেশটি বাতিল করে পরামর্শক কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেই প্রতিবেদনের আলোকে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে দেশের রাজস্ব ও মানুষের ভালোর জন্য নতুন অধ্যাদেশ জারি হবে। অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে তিন দিনের কলমবিরতি দিয়েছি।’

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্ধারিত সময়ে কলমবিরতি পালন করবেন। তবে কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, আমদানি-রপ্তানি ও বাজেট-এই তিনটি কার্যক্রম চালু থাকবে। বাকি সব কার্যক্রম কলমবিরতির আওতায় বন্ধ থাকবে। আগামী ১৭ মে বিকাল ৩টায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি সংস্কার কার্যক্রমের প্রক্রিয়া হিসেবে সংস্কার কমিশন করেছে। তেমনিভাবে রাজস্ব বোর্ড সংস্কারের জন্য একটি পরামর্শক কমিটিও করা হয়েছিল। তারাও অন্য কমিশনের মতো প্রতিবেদন দাখিল করেছে।  আমরা সবাই পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন দেখতে পাইনি। কারণ এটি প্রকাশ করা হয়নি। রাজস্ব সংস্কার কমিশনের সঙ্গে যারা ছিলেন, তাদের মতামতের প্রতিফলনও এই অধ্যাদেশে হয়নি। কোনো ক্যাডারের বিরুদ্ধে বা বিপক্ষে নয়, যে অধ্যাদেশ হয়েছে সেই অধ্যাদেশের ফরমেট অনুযায়ী ট্যাক্স ও কাস্টমস ক্যাডারদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পলিসি কন্ট্রিবিউশনে কন্ট্রিবিউট করার মতো অবস্থা নেই। কোনো ফাংশনাল অবস্থান দেখতে পাচ্ছি না, এটাই আমাদের অবস্থানগত জায়গা।

নতুন অধ্যাদেশ জারির ফলে দীর্ঘদিনের রাজস্ব সংস্থা এনবিআরের অস্তিত্ব এখন আর থাকল না। রাজস্ব খাত এখন থেকে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এ দুই ভাগে পরিচালিত হবে। এনবিআরের কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তারা এতে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
অধ্যাদেশের খসড়া পর্যায় থেকেই কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সরকার তাদের মতামত উপেক্ষা করে প্রায় অপরিবর্তিত খসড়ার ভিত্তিতে চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি করেছে। রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে।