শেয়ার বিজ ডেস্ক: কালবৈশাখীর ঝড়ে দুই জেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া নীলফামারীতে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
নীলফামারী: নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে রেনুফা বেগম (২৭) নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। অপরদিকে রতœা রায় নামের এক নারী আহত হয়েছেন। নিহত রেনুফা জেলার জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ বেরুবন্দ গ্রামের আনারুল ইসলামের স্ত্রী। এদিকে আহত রতœা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের কাছাড়ী বাজার গ্রামের মৃত গজেন্দ্র নাথের মেয়ে। গত সোমবার সন্ধ্যায় বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে নীলফামারী সদরসহ জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে শতাধিক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরবাড়ি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও বোরো, ভুট্টা, কলা, আম, কাঁঠালের মোচা ও মরিচ ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদুল ইসলাম জানান, রাত ৯টায় আমার ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে রেনুফার বাড়িতে একটি আকাশমণি গাছের ডাল ভেঙে আটকিয়ে ছিল। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিহত রেনুফা ওই ডাল ধরে টান দিলে তার গায়ের ওপর পড়ে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান।
অপরদিকে রতœা ঝড়ের সময় বাঁশের বেড়া ঠিক করতে গেলে পাশে থাকা নারিকেল গাছ ঝড়ে ভেঙে পড়ায় তার ডান হাতের কবজি ও কানের নিচে ফেটে যায়। এতে অল্পের জন্য তিনি মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষায় পান।
জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম জানান, গতকালের বয়ে যাওয়া ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছের ডাল আজ সকালে কাটতে দিয়ে তার মৃত্যু হয়।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও ধান, ভুট্টা, কলা ক্ষেত, আম ও কাঁঠালের মোচা ও মরিচ ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছি। এ ধরনের লিখিত আবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কয়েকটি স্থানে ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত সোমবার রাতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ ঝড় হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ কুটিরপার, চৌধুরী বাজার ও বালাপাড়া এলাকায় বয়ে যাওয়া ঝড়ে গাছপালা ভেঙে ঘরবাড়ি ও রাস্তায় পড়ে গেছে। উড়ে গেছে টিনের চালাসহ ঘরবাড়ির বিভিন্ন অংশ। অনেকেরই গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি ও কবুতর হতাহত হয়েছে। ঘর ভেঙে পড়ায় ছোট শিশুসহ বৃদ্ধ আহত হলেও নিহত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
দুর্গত এলাকার লোকজনের তথ্যমতে, তিস্তাপাড়ের অন্যান্য স্থান ও চরের বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে। রাতে চরের দুর্গম এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন সম্ভব হয়নি।
চৌধুরী বাজার এলাকার গৃহিণী মুনমুন বলেন, ‘স্বামী কুমিল্লায় রিকশা চালায়, এই ঝড়োত ঘর উড়ি যায়া (গিয়া) টিনের চাল ছাওয়াগুলোর গাৎ (গায়ে) পড়ছিলো। পরে টানি বের করছি ছাওয়াক। দুইটা চড়াই (মুরগি) মরছে। বাকিগুলা কোন্টে কোন্টে উড়ি গেইছে জানোংনা।’
কুটিরপার এলাকার বিধবা বৃদ্ধা অলিমা বেগম বলেন, ‘একলা ঘরে থাকি, হঠাৎ ঝড়ে বড় একটা গাছ ঘরের ওপর পড়েছে। পুরো ঘর ভেঙে গেছে। এখন কীভাবে থাকব, কোথায় থাকব জানি না।’
এ বিষয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন আদিতমারী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিজুল ইসলামের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।