কাস্টমসের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি সোনা উধাও

নিজস্ব প্রতিবেদক: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের কাছ থেকে জব্দ হওয়া সোনার বার, অলংকারসহ মূল্যবান জিনিস রাখা হয় ঢাকা কাস্টম হাউসের গুদামে। অথচ ঢাকা কাস্টমসের গুদাম থেকে প্রায় ৫৫ কেজি সোনার হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। কীভাবে এত সোনা উধাও হলো সে বিষয়ে মুখ খুলছেন না কাস্টমস হাউসের কোনো কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে কাস্টমস কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বিমানবন্দর থানায় ঢাকা কাস্টম হাউসের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যাতে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি সোনা খোয়া গেছে বলা হয়েছে। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এই স্বর্ণ আটক করা হয়েছে। জানা গেছে, কাস্টমসের পক্ষ থেকেও তদন্ত করা হচ্ছে। তারপরে কী কী খোঁয়া গেছে, তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

গতকাল রোববার ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার একেএম নুরুল হুদা আজাদ বলেন, ‘গুদাম থেকে সোনা চুরি হওয়ার বিষয়টি মোটামুটিভাবে আমরা নিশ্চিত। একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কাজ করছে বলে আমরা অনুমান করছি। কাস্টমস হাউস ও সিআইডিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটি টিম দোষীদের শনাক্ত করতে কাজ করছে। আমরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।

অপরদিকে, কাস্টমস হাউসের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই জব্দকৃত পণ্য গুদাম থেকে চুরি হচ্ছেÑএমন অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা কাস্টম হাউস কাজ করছিল। শুক্রবার ও শনিবার কাস্টমস হাউসের আলাদা দুটি টিম গুদামের মালামালের তালিকা প্রস্তুত করা এবং গুদাম পরিষ্কারের কাজ শুরু করে। শনিবার একটি টিম দেখতে পায় যে, বাইরে থেকে তালা অক্ষত থাকলেও ভেতরের লকার ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। এরপরই সন্দেহ সত্যি বলে প্রমাণিত হয়। গুদামের মালামালের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। দ্রুতই চুরি হওয়া প্রকৃত মালামাল সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য বের করা সম্ভব হবে। তারা আরও বলেন, আমাদের ধারণা চোর নিজেদের ভেতরেই রয়েছে। তাদের শনাক্তে কাজ করছে একটি যৌথ টিম।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ অর্থাৎ হারিয়ে যাওয়া ও খুঁজে পাওয়া পণ্য রাখার স্থানের পাশেই রয়েছে কাস্টমসের গুদাম। বিমানবন্দরে কাস্টমসহ বিভিন্ন এজেন্সির জব্দ করা মূল্যবান সামগ্রী জমা থাকে এই গুদামে।

সূত্রমতে, বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টায় পালাক্রমে চারটি শিফট কাজ করে। এই শিফটগুলোয় জব্দ হওয়া সোনা এক গুদামেই রাখা হতো এত দিন। তবে স্বচ্ছতা আনার জন্য ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার একেএম নুরুল হুদা আজাদ শিফটভিত্তিক জব্দ হওয়া সোনা আলাদা আলাদা লকারে রাখার নির্দেশনা দেন। তিনি নির্দেশ দেন, যে শিফট জব্দ করবে তাদের জব্দ করা সোনা তাদের লকারে থাকবে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার একেএম নুরুল হুদা আজাদ খবর পান প্রায় ১৫ কেজি সোনা গুদামে নেই। এরপর একটি কমিটি করে দেয়া হয় গুদামের  সব সোনা গণনা করার জন্য। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনার সত্যতা মিলে। পরে আবার তা গণনা করছে কাস্টমস। রোববার গণনা শেষে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি সোনা খোয়া গেছে বলে জানা গেছে। বিমানবন্দরের সূত্র বলছে, কাস্টমসের গুদামে কাস্টমসের কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কারও প্রবেশের সুযোগ নেই। সুরক্ষিত এই গুদামে চুরি হলে কাস্টমসের কেউ করেছে।