নিজস্ব প্রতিবেদক:মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতাধীন সব প্রতিষ্ঠান ধূমপানমুক্ত নিশ্চিত ও তদারকি, প্রশিক্ষণ কারিকুলামে তামাক নিয়ন্ত্রণ অন্তর্ভুক্ত এবং কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্যদের তামাকমুক্ত রাখতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) উদ্যোগে গতকাল অধিদপ্তরের সম্মেলক কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন।
ফরিদা পারভীন আরও বলেন, বিশাল সংখ্যক জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করছে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। নারী ও শিশুরা তামাক ও ধূমপানের ভয়াবহতার শিকার হচ্ছেন। বছরে ৬৫ হাজার শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক! পরিবারে বাবা ধূমপায়ী হলে এই ভয়াবহতা বেশি হয়ে থাকে। তামাকবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের ৪৯২টি উপজেলা ও ৬৪ জেলা অফিস ধূমপানমুক্ত ঘোষণা এবং নিয়মিত তদারকি করা হবে। সাত হাজারের অধিক কিশোর-কিশোরী ক্লাবের মাধ্যমে তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা হবে। অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কারিকুলামে তামাক নিয়ন্ত্রণ যুক্ত করা হবে। মহিলাদের ২০ হাজারের বেশি সমিতি রয়েছে সেগুলোর নিবন্ধন ও কার্যক্রমে তামাকবিরোধী প্রচারণা করা হবে। এছাড়া শুদ্ধাচার প্রক্রিয়ায় ধূমপানের ক্ষতিসংবলিত বার্তা প্রদান করা হবে বলে জানান তিনি।
মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের জিসিও প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন, শিশু দিবাযতœ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শবনম মুস্তারী, আইসিভিজিডি প্রকল্প পরিচালক মোস্তফা কামাল, সচেতনতা শাখার উপপরিচালক মাহমুদা বেগম, উপপরিচালক আয়েশা সিদ্দিকা, কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. লিয়াকত আলী। মানসের প্রকল্প সমন্বয়কারী উম্মে জান্নাতের সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ট্রেজারার হোসনে আরা বেগম রিনা।
প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে তামাকজনিত রোগ-বালাই, মৃত্যুহার ও অন্যান্য ক্ষয়-ক্ষতি বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেরা সেবন না করেও তামাকের কারণে পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। গ্যাটস্-২০১৭-এর তথ্যমতে, ৪৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক বা ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ গণপরিবহনে, প্রাপ্তবয়সী চাকরিজীবীদের ৪২ দশমিক সাত শতাংশ বা ৮১ লাখ মানুষ কর্মস্থলে এবং ৪ কোটি ৮ লাখ মানুষ বাসায় বা গৃহ-অভ্যন্তরে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি বদলাতে হবে। তামাক কোম্পানিগুলো আমাদের নারী ও শিশুদের দ্বারা তামাক কারখানায় অমানবিক পরিবেশে উৎপাদন কাজ করাচ্ছে। শিশুশ্রম বন্ধে দেশের আইনকেও তোয়াক্কা করে না তারা। আমাদের কিশোর-কিশোরী, তরুণীদের মধ্যে সিগারেট সেবন বাড়ছে মূলত কোম্পানির অপতৎপরতায়। তামাক কোম্পানিগুলো ছোটদের টার্গেট করে দীর্ঘমেয়াদে ভোক্তা বানানোর জন্য। মাদককাসক্তির মূলে রয়েছে ধূমপান। ধূমপান বন্ধ হলে আমাদের তরুণ প্রজšে§র মধ্যে মাদকাসক্তি সমস্যা কমে আসবে।
সেমিনারে বক্তারা আরও বলেন, মহিলারা কর্মক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই পরোক্ষভাবে ধূমপানের কারণে শিকার হচ্ছেন। তাই, তামাকের চাহিদা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি উৎপাদন বন্ধের দিকে যেতে হবে। ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে কাজ করার অনেক ক্ষেত্র আছে। মাঠ পর্যায়ে উঠান বৈঠক, সভা, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনে এটি যুক্ত করা প্রয়োজন। নিজেদের সব অধিক্ষেত্রে ‘ধূমপানমুক্ত সাইনেজ’ স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে। আইন লঙ্ঘন করে যারা যত্রতত্র ধূমপান করেন তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত ও সেটা প্রচার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার অভিজাত এলাকা, রেস্তোরাঁগুলোতে স্মোকিং জোনে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের ধূমপান ও অন্য নেশা সেবন করতে দেখা যাচ্ছে। এটা আমাদের সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক।