সানজিদা রহমান: সারা বিশ্বের নজর এখন ইউক্রেনের দিকে। দেশটিতে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এই যুদ্ধ। যদিও ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধে জয়ের পথে ইউক্রেন, এমনটাই দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি। শুক্রবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন তিনি। জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেন কৌশলগত যুগসন্ধিক্ষণে রয়েছে। শত্রুর হাত থেকে আমাদের ভূখন্ড রক্ষা করতে কত সময় লাগবে সেটি বলা মুশকিল। তবে এটা বলা সহজ যে, আমরা আমাদের ভূখন্ডকে মুক্ত করব। আমরা আমাদের লক্ষ্যের কাছাকাছি। আমরা যুদ্ধ জয়ের পথে রয়েছি।
এদিকে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে রাশিয়া। পশ্চিমা বহু দেশ এবং তাদের মিত্রদেশগুলোর কাছ থেকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় পড়ছে মস্কো। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইস্যু ছাড়াও চাপ বাড়ছে বাণিজ্যিক ভাবেও। তারই ফলস্বরুপ ‘সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের’মর্যাদা হারাতে যাচ্ছে দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার জবাবে এবার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে রাশিয়া।
চলমান এই সামরিক অভিযানের মধ্যেই রুশ সেনারা ফের একটি পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। একইসঙ্গে মস্কো পারমাণবিক সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে দেশটি।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক পরিদর্শক সংস্থা জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে অবস্থিত ওই পারমাণবিক স্থাপনায় বৃহস্পতিবার রাতে হামলা চালায় রুশ সামরিক বাহিনী। রুশ সেনাদের কামানের গোলাবর্ষণের কারণে পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রটির বিদুৎ চলে যায় এবং এতে করে সেটি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
অপরদিকে, ইউক্রেন জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচি চালাচ্ছে বলে রাশিয়া যে অভিযোগ করেছে, তার পক্ষে কোনো প্রমাণ পায়নি জাতিসংঘ।
এদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই অনেকে এটিকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা বলে মনে করছিলেন। সংঘাত এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন বা ন্যাটো সৈন্য ইউক্রেনে পাঠাতে নারাজ। তবে কোনো কারণে ন্যাটো-রাশিয়া মুখোমুখি হলে তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
তবে ইউক্রেনের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করলেও দেশটিকে দ্রুত ইইউ সদস্য করতে রাজি নন ইউরোপীয় নেতারা। রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির প্রশ্নেও তাদের মতপার্থক্য দূর করা যাচ্ছে না।
প্যারিসের উপকণ্ঠে ভার্সাইয়ে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিনে ইউক্রেনের অন্যান্য অনুরোধ ও দাবি মানতে নারাজ ছিলেন না সরকার প্রধানরা। বিশেষ করে ইইউ সদস্যপদের আবেদনের ক্ষেত্রে ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ পদ্ধতিতে সব প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চালিয়ে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত নন তারা।
এদিকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের খুব কাছাকাছি চলে গেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। শনিবার রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে রুশ বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনের বাহিনীর তীব্র লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে।
সেখানে পশ্চিমা দেশগুলোর সরবরাহ করা ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী অস্ত্র ও কামান এবং ড্রোন ব্যবহার করে তাদের বাধা দিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। কিয়েভের দক্ষিণে অবস্থিত ইউক্রেনের বাহিনীর একটি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।