আমানুর রহমান খোকন, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম (দাশেরহাট)-নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারী-সোনাহাট স্থলবন্দর সড়কে প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় মহাসড়কের উন্নয়নের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিন্মমানের ইট, বালি ও পাথর ব্যবহার করে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় পর্যায়ে নানা ধরনের অভিযোগ থাকার পরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে নিন্মমানের নির্মাণকাজ।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম তারামন বিবির মোড় থেকে দক্ষিণ ব্যাপারীহাট পর্যন্ত রাস্তার নির্মাণকাজ করছে ‘মেসার্স মইনুদ্দিন বাঁশি’ নামীয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ রয়েছে, এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ধরলা সেতুর প্রস্তাবিত শেখ রাসেল পার্কে ঘর তৈরিতে অনিয়ম করেছে। অবৈধ পন্থায় ধরলা নদীর বালি ড্রেজিং করে উত্তোলন করে রাস্তায় ডাম্পিং করারও অভিযোগ রয়েছে।
ঢালাই রাস্তার কাজে রড ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এছাড়া ঢালাই করার সময় বালি ও সিমেন্টের পরিমাণ নিরীক্ষণের হিসাবে গরমিল পাওয়া যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ইটের খোয়ার সঙ্গে নিন্মমানের মাটিযুক্ত ভিটিবালি যুক্ত করে মহাসড়কে ডাম্পিং করা হচ্ছে। বালি ডাম্পিংয়ের পর নিন্মমানের ইটের খোয়ার সঙ্গে বালি মিশিয়ে দায়সারা রোলিং করে পিসিংয়ের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী জাতীয় মহাসড়কের উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের বক্তব্য ‘এ বিষয়ে মেসার্স মইনুদ্দিন বাঁশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার আব্দুল মতিন বলেন, এ কাজে অনিয়ম করার সুযোগ নেই। কাজের মান খারাপ হলে ঠিকাদারের লোকসান হবে। কারণ তিন বছর এ মহাসড়কের কাজ পরীক্ষায় থাকবে।’
অপরদিকে দক্ষিণ ব্যাপারীহাট থেকে রায়গঞ্জ পর্যন্ত জাতীয় মহাসড়কের উন্নীতকরণে প্যাকেজ নং- ইজিপি ০১/এসআই/আরআরসি/ডিইভি/২০১৯-২০২০ কাজ করছে স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড-রানা বিল্ডার্স (প্রা.) লি. (জেভি)। এ প্রতিষ্ঠানটিও নিজ খেয়াল-খুশিমতো কাজ করছে।
দক্ষিণ ব্যাপারীহাট এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও আমিনুর রহমান বলেন, মহাসড়কের কাজে অনিয়মের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাতের আঁধারে তড়িঘড়ি করে কাজগুলো করছে। পরিমাণমতো ইট, বালি, পাথর ও রড ব্যবহার করা হচ্ছে না।
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান বলেন, পাটেশ্বরী বাজারের ২০০ গজের ভেতরেই ধরলা নদী থেকে অবৈধ পন্থায় ড্রেজিং করে বালি উত্তোলন করে এ রাস্তার কাজ করা হচ্ছে। রাস্তা নির্মাণের পর ধরলা নদীর ভাঙনের মুখে কত দিন এ মহাসড়কটি টিকে থাকবে, সবার প্রথম সেই বিষয়টি আমাদের ভেবে দেখা দরকার।
কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় মহাসড়কের উন্নয়নের কাজের চারটি প্যাকেজের মধ্যে তিনটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। কুড়িগ্রাম দাশেরহাট থেকে তারামন বিবি মোড় পর্যন্ত ল্যান্ড সার্ভের জটিলতা থাকায় কাজ শুরু করতে পারছি না। তারামন বিবি মোড় থেকে রায়গঞ্জ ব্রিজ পর্যন্ত দুটি প্যাকেজের কাজ শুরু করা হয়েছে। রায়গঞ্জ ব্রিজ থেকে সোনাহাট স্থলবন্দর পর্যন্ত প্যাকেজটির চুক্তি এখনও হয়নি। চলমান কাজ সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি করা হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিন্মমানের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি অবৈধ পন্থায় ধরলা নদীর বালি উত্তোলনের বিষয়ে কিছু জানেন না।