কুমিল্লা ভ্যাটের ‘ট্রিপল হ্যাট্রিক’

## নিবন্ধন আড়াই লাখ আর রিটার্ন এক লাখ পার হয়েছে

## এপ্রিল মাসে মোট রিটার্ন দাখিল প্রবৃদ্ধি ৪২.৪৮%

## রিটার্ন দাখিল সংখ্যায় প্রথম চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট

নিজস্ব প্রতিবেদক: অনলাইন নিবন্ধনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রিটার্ন দাখিলের হার। নিবন্ধন আর রিটার্ন বাড়াতে কমিশনারেটগুলোর মধ্যে চলছে প্রতিযোগিতা। তবে সেই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট। এপ্রিল মাসে কমিশনারেটগুলোর মধ্যে অনলাইন রিটার্ন দাখিলে সর্বোচ্চ ৯৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন প্রথম স্থানে রয়েছে কুমিল্লা কমিশনারেট।

শুধু এপ্রিল মাস নয়, অনলাইন রিটার্ন দাখিল প্রবৃদ্ধিতে ট্রিপল হ্যাট্রিক করেছে এ কমিশনারেট। আর অনলাইন রিটার্ন দাখিলে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যশোর কমিশনারেট। এপ্রিল মাসে এ কমিশনারেটের প্রবৃদ্ধি ৯৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে নিবন্ধনের তুলনায় রিটার্ন দাখিলের সংখ্যার দিক থেকে বরাবরের মতো প্রথম স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট। আর এপ্রিল মাসে নিবন্ধনের তুলনায় এনবিআরের রিটার্ন দাখিল প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪২ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

কুমিল্লা ভ্যাটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে টানা লকডাউন চলছে। রমজান মাসে কুমিল্লায় অন্যবিধ কর্মযজ্ঞ। ব্যবসায়ীদের মনোযোগ বেচাকেনায়। কর্মচারীরাও ব্যস্ত। অনলাইন রিটার্নের তথ্য উপাত্ত পাওয়া কঠিন। ১৫ তারিখের রাত ১২ টার মধ্যে রিটার্ন জমা শেষ করতে হবে। টানা লকডাউন, মাহে রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতর নিয়ে কর্মকর্তারা রিটার্ন দাখিল নিয়ে ছিল চিন্তিত; তবুও থেমে থাকেনি কমিশনারেটের কর্মবিলাসী টিম। কিভাবে অনলাইন রিটার্ন দাখিল সফল করা যায় ঈদের ছুটির আগের দিন কমিশনারের কক্ষে সভা করে কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজ ভাগ করে দেয়া হয়। অনেক কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় ঈদের ছুটি ভোগ করলেন না। তারা অনলাইন রিটার্ন দাখিলের কাজ অগ্রাধিকার দেন। কেউ কেউ ছুটি নিয়েও ছুটি বাতিল করে অফিস করেন। লক্ষ্য, কুমিল্লা ভ্যাট টিমকে নবম বারের এর মত চ্যাম্পিয়ন করা।

কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন, রমজান মাসে লকডাউন চলাকালিন কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ায় রিটার্ন দাখিল বেড়েছে। এরমধ্যে রয়েছে-রিটার্ন দাখিলে বিশেষ নজরদারি, লকডাউনে করদাতাদের বিরক্ত না করে সার্কেল অফিস থেকে টেলিফোনে যোগাযোগ, স্বল্প সংখ্যক জনবল থেকে দক্ষদেরকে বাছাই করে গভীর রাত পর্যমত্ম রিটার্ন দাখিল, কর্মকর্তারা মাস্ক পড়ে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মকান্ড তদারকি, যানবাহন না থাকায় আইনশৃংখলা বাহিনীর সহায়তা গ্রহণ, রিটার্ন দেয়নি এমন করদাতাদের এসএমএস প্রেরণ, গণমাধ্যম, স্থানীয় মার্কেট ও লোকালয়ে মাইকিং করে প্রচারণা ইত্যাদি।

এনবিআর সূত্রমতে, এনবিআরের জুলাই মাসের অনলাইন রিটার্ন দাখিল হার ছিল ২৫ দশমিক ১৮ শতাংশ; যা বর্তমানে এপ্রিল মাসে দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অন্যান্য কমিশনারেটগুলোর মধ্যেও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, ঢাকা (উত্তর), ঢাকা (দক্ষিণ), ঢাকা (পূর্ব) ও ঢাকা (পশ্চিম) এর রিটার্ন দাখিলের হার ক্রমান্বয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কুমিল্লা কমিশনারেটের আগস্ট মাসের রিটার্ন দাখিলের হার ৯১ দশমিক ১৮ শতাংশ, সেপ্টেম্বর মাসে ৯৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ, অক্টোবর মাসে ৯৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, নভেম্বর মাসে ৯৩ দশমিক ৮০ শতাংশ, ডিসেম্বর মাসে ৯৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ, জানুয়ারি মাসে ৯৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, ফেব্রুয়ারি মাসে ৯৭ দশমিক ২৮ শতাংশ, মার্চ মাসে ৯৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ ও এপ্রিল মাসে ৯৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এ কমিশনারেটে রিটার্ন দাখিলযোগ্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০ হাজার ৩৯৭টি। এরমধ্যে এপ্রিল মাসে ১৪টি প্রতিষ্ঠান ম্যানুয়ালি আর ৯ হাজার ৯৮৯টি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছে। নিবন্ধনের তুলনায় অনলাইনে রিটার্ন দাখিল প্রবৃদ্ধি ৯৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

আরো দেখা গেছে, এপ্রিল পর্যন্ত অনলাইন নিবন্ধন নিয়েছে দুই লাখ ৫৫ হাজার ৪৯৭ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে এপ্রিল মাসে রিটার্ন দাখিল করেছে এক লাখ ৮ হাজার ৫২৬টি; রিটার্ন দাখিলের হার ৪২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এপ্রিল মাসে অনলাইন রিটার্ন দাখিলে ৯৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে প্রথম স্থানে রয়েছে কুমিল্লা। ৯৪ দশমিক ৫২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যশোর ভ্যাট। এছাড়া তৃতীয় সিলেট, চতুর্থ রংপুর, পঞ্চম এলটিইউ, ষষ্ঠ চট্টগ্রাম, সপ্তম রাজশাহী, অষ্টম ভ্যাট ঢাকা পূর্ব, নবম খুলনা, দশম ভ্যাট ঢাকা পশ্চিম, একাদশ ভ্যাট ঢাকা উত্তর ও দ্বাদশ ভ্যাট ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেট। অপরদিকে, নিবন্ধনের তুলনায় রিটার্ন দাখিল সংখ্যায় সারাদেশের মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট। আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যশোর ভ্যাট।

টানা নয়বার প্রথম হওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে সহকারী কমিশনার (সদর দপ্তর, কুমিল্লা) মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিপন বলেন, মহামারি আছে, থাকছে। দেশের অর্থনীতির ভীতও দূর্বল হতে দেয়া যাবে না। তাই ঈদের বন্ধের মধ্যেও কুমিল্লার কর্মপ্রবণ টীম তাদের আন্তরিকতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। টানা লকডাউনেও ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। দলবদ্ধ প্রচেষ্টা ও প্রতিযোগিতা এ অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল নিয়ামক। কুমিল্লা কমিশনারেটের নেয়া ব্যতিক্রমী উদ্যোগ কুমিল্লাকে সেরার আসন ধরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করেছে। কুমিল্লার এই স্পন্দন অন্যান্য কমিশনারেটগুলোর মধ্যে তৈরি করেছে নতুন উদ্দীপনা। ফলে এনবিআরের সামগ্রিক রিটার্ন পেশের হার বাড়ছে।

###