কুমেক-ইপিজেড-কোটবাড়ী সড়ক বেহাল

মামশাদ কবীর, কুমিল্লা: কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক)-ইপিজেড-কোটবাড়ী সড়কটি খুবই ব্যস্ততম। মহানগরীর টমসমব্রিজ থেকে পূর্ব-পশ্চিমে বিভক্ত সড়ক দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করলেও বছরজুড়ে ভাঙা সড়কটি মাঝে মাঝে নামমাত্র সংস্কার করা হয়। এতে দিন কয়েকের জন্য যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও কিছুতেই জনদুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না। পাশাপাশি পথচারীদের হাঁটার জন্য ফুটপাত না থাকায় পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-টমসমব্রিজ-কোটবাড়ী সড়কটি কুমিল্লা মহানগরীর অন্যতম প্রধান সড়ক। টমসমব্রিজ থেকে পূর্ব-পশ্চিমে ভাগ হওয়া সড়কটির পূর্ব অংশে রয়েছে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড), কুমিল্লা সদর উপজেলা পরিষদ, কুমিল্লা কেটিসিসি, হাইওয়ে পূর্বাঞ্চলের (কুমিল্লা) পুলিশ সুপারের কার্যালয়, পরিবেশ অধিদফতরের কার্যালয়, জেলার অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এছাড়াও এ সড়কটি ব্যবহার করে মহানগরীর আটটি ওয়ার্ডের বিরাট অংশের জনগণ পাশাপাশি টমসমব্রিজ থেকে পশ্চিম অংশে জেলা পশু অধিদফতর, সার্ভে ইনস্টিটিউট, আনসার একাডেমি, র‌্যাব-১১, সিপিসি-২ কার্যালয়, সদর উপজেলার দৌলতপুর, বলারামপুর এলাকা, সিটি করপোরেশনের দুটি ওয়ার্ড, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের ঐতিহাসিক প্রতœতত্ত্বস্থল, ময়নামতি জাদুঘর, কুমিল্লা সেনানিবাস, কুমিল্লা বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দফতর ছাড়াও জেলার সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়নবাসীও এ সড়ক পথে যাতায়াত করেন।
এ সড়কপথে প্রতিদিন শত শত রোগী যাতায়াত করেন। জেলার বাইরে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেও উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হচ্ছে রোগীদের। কিন্তু ভাঙাচোরা সড়কে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সবচেয়ে চরম দুর্ভোগ পেহাতে হয় গর্ভবর্তীদের। সড়কের এমনই বেহাল দশা যে, রোগী কিংবা স্বজনরা একবারের পর দ্বিতীয়বার এ সড়ক ব্যবহার করতে চায় না। বাধ্য হয়েই তাই অনেকেই নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।
নোয়াখালী সদর থেকে আসা এক রোগীর স্বজন রিয়াজ মাহমুদ জানান, এ সড়ক দিয়ে চলাচল করলে ভালো মানুষও অসুস্থ হবে। ইপিজেড এলাকায় সড়কের পাশে বেসরকারি ব্যাংক বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন জানান, বৃষ্টি এলে সড়কটিতে পানি জমে যায়। সারা বছর ধরে ভাঙা রাস্তার কারণে যানবাহন চলাচলে যেমন দুর্ভোগ, তেমনি পথচারীদেরও একই অবস্থা। ইপিজেড এলাকায় পুরো বছরই রাস্তায় পানি জমে থাকে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মতিউর জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী প্রতিদিন ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে মহানগরীতে আসা যাওয়া করছেন। কুমিল্লা ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টডিয়ান ড. আবদুল্লাহ জানান, কুমিল্লা পল্লি উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) এবং লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ে প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনসহ ময়নামতি যাদুঘর দেখতে প্রতিদিন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত পর্যটক এ সড়ক ব্যবহার করেন। সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, সড়কটি সংস্কারে গত জুনে দু’দফায় ৬৪ ও ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ব্যস্ততম এ সড়কটি সংস্কারে বরাদ্দ থাকলেও সুষ্ঠু নজরদারির অভাবে কখনওই মানসম্পন্ন কাজ হয় না। পাথরের সড়কে ইটের ব্যবহার বাড়ছে। ভারি যান চলাচলে সে ইট অল্প সময়েই ভেঙে যাচ্ছে। ফলে পুরো বছর ধরেই সড়কটি ব্যবহারকারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার জানান, সড়কটির বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি থেকে কোটবাড়ী হয়ে পার্শ্ববর্তী বরুড়া পর্যন্ত সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ৫০ কোটি টাকার এই সংস্কারকাজ আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যেই শুরু হবে।