কুষ্টিয়ায় আমনের বাম্পার ফলন, দামও ভালো

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ায় আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ বছর আমনের ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। বিঘাপ্রতি আমনের ফলন হয়েছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মণ। বাজারে নতুন ধান কিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত। গতবারের থেকে দাম বেশি হলেও এতে খুশি হতে পারছে না কৃষক। এ বছর সার, বীজ, তেল ও শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় ধান উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি হয়েছে। পাশাপাশি বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে সেচ খরচও বেশি হওয়ায় সেই তুলনায় ধানের দাম কম বলে মনে করছেন কৃষকরা। তবে বিছালির দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ হাজার ৮৯৫ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৮৮ হাজার ৯১৯ হেক্টর, যা সামান্য বেশি। এবার জেলায় বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি ধান ৮৭, ব্রি ধান ৭১, ব্রি ধান ৭৫ ও ব্রি ধান ১৭। এর মধ্যে ব্রি ধান ৮৭ বিঘায় ২০ মণের বেশি ফলন হওয়ার আশা করা হচ্ছে। গত বছর এ ধান জেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হলেও এবার আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৯৮০ হেক্টর।

কুষ্টিয়া শহরতলির জগতি আহম্মদপুর এলাকা। সেখানে মাঠজুড়ে আবাদ হয়েছে আমন। কৃষকরা ধান কাটাও শুরু করেছেন। বন্ধ সুগার মিলের জমি লিজ নিয়ে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছেন কৃষক নুরুল কাদের। সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে ধান আগেভাগেই পেকে যাওয়ায় কেটে নিয়েছেন। এদিকে ধান কাটা ও অন্যদিকে চলছে মাড়াইয়ের কাজ।

ধান চাষি নুরুল কাদের বলেন, জিকে ও বরিংয়ের পানি দিয়ে এবার আমন আবাদ করতে হয়েছে। বৃষ্টি কম হওয়ায় আবাদে সমস্যা হয়। তারপরও আল্লাহর রহমতে ভালো ফলন হয়েছে। বিঘায় প্রায় ১৫ মণ ফলন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ধান বিক্রিও করেছি কিছু। প্রতি মণ দাম পেয়েছি ১ হাজার ২৫০ টাকা। আর বিছালি বিক্রি করেছি এক হাজার আটি ৩ হাজার ৪০০ টাকায়। এতে করে পুষিয়ে যাচ্ছে।

একই এলাকার কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, তার প্রায় ২০ বিঘা জমিতে আমন ধান রয়েছে। এখনও বরিং থেকে সেচ দিতে হচ্ছে। পানির অন্য কোনো উৎস না থাকায় এ বছর সেচ খরচ অনেক বেশি হয়েছে। বাজারে ধানের দাম মাত্র ১ হাজার ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এ দামে ধান বিক্রি করে লোকসানে পড়তে হবে। তবে বিছালিতে খরচ কিছুটা পুষিয়ে যাবে।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া এলাকাতেও ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষক বজলুর রহমান বলেন, বৃষ্টি কম হওয়ায় এবার মাজরা পোকার আক্রমণ বেশি ছিল। শেষ দিকে বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকদের বেশ উপকার হয়। ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে।

একই এলাকার ধানচাষি আতিয়ার রহমান বলেন, ধান কাটা শ্রমিকদের চাহিদাও বাড়ছে। পুরোপুরি ধান কাটা শুরু হলে শ্রমিক সংকট হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক জমির মালিক। আগেভাগে যারা ধান কাটছেন তাদের খরচ কিছুটা কম হচ্ছে। এখন সারাদিন ধান কাটতে এখন শ্রমিক এক বেলা খেয়ে হাজিরা নিচ্ছেন ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা। পুরোপুরি ধান কাটা শুরু হলে হাজিরা বেড়ে ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা হতে পারে বলে জানা গেছে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধান রোপণ, পরিচর্যা, কাটা-মাড়াই করতে প্রতিমণ ধান উৎপাদনে খরচ পড়ছে প্রায় ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত। এখন ধানের দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা। এতে করে খুব একটা লাভ হচ্ছে না। তবে বিছালির দাম যোগ করলে কিছুটা লাভ হচ্ছে। তবে তা দিয়ে কৃষকদের দুই মাসও সংসার চলে না। সব কিছুর দাম বেড়েছে, এতে ধানের দামও সরকারকে সেভাবে নির্ধারণ করতে হবে। যাতে কৃষকরা ভালো দাম পায়।

এদিকে, কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামেও নতুন ধান স্বল্প পরিসরে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। পুরোপুরি ধান কেনাবেচা শুরু হবে মাসখানেক পর। এখন নতুন ধানি গোল্ড প্রতি মণ কিনছেন ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২৩০ টাকায়।

চালকল মালিক সমিতির একাংশের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, আমন মৌসুমে মূলত ধানি গোল্ড, স্বর্ণা-৫, গুটি স্বর্ণা বিনা-৭, ৪৯ ও হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করেছেন কৃষকরা। সারাদেশে এবার ধানের আবাদ ভালো হয়েছে। ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। সামনে খাদ্যের কোনো সংকট হবে না। তবে ধানের দাম এখই হাজার টাকার ওপরে। তাই চালের বাজার কমার সম্ভাবনা কম। পুরোপুরি ধান উঠলে সাময়িকভাবে চালের দাম কিছুটা কমতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, এবার আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে। দুর্যোগ না থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। ধান কাটা সবে শুরু হয়েছে। বিনা-১৭, বিনা-১৬, বিনা ২০সহ ব্রি ধান ৮৭সহ উচ্চ ফলন নানা জাত এবার আবাদ করেছেন কৃষকরা। হেক্টর প্রতি ফলন গতবারের তুলনায় বেশি হবে বলে জানান তিনি।