কুষ্টিয়ায় ছাদবাগানে বাড়ছে সবজি ও ফুল-ফলের চাষ

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় দিন দিন নগরায়ণের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে চাষাবাদের জমির পরিমাণ। অবাধে নিধন হচ্ছে বৃক্ষ। অন্যদিকে কংক্রিটের শহরে সংকুচিত হয়ে পড়ছে মানুষের গাছ লাগানোর জায়গা। তবে এরই মধ্যে আশা জাগাচ্ছে বহুতল ভবনের ওপর গড়ে তোলা ছাদবাগান। এসব ছাদবাগানের ফলে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক উপায়ে সার ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদিত হচ্ছে, অন্যদিকে রাসায়নিক দ্রব্যবিহীন ফল পাচ্ছেন ছাদবাগান মালিকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কুষ্টিয়ায় প্রায় ২০০ বাড়ির ছাদে বাগান করা হয়েছে। ছাদে এখন বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ ছাড়াও সবজি ও ফলের চাষ হচ্ছে। ছাদে ঝুলছে বারোমাসি বিভিন্ন প্রজাতির ফল। এগুলোর মধ্যে আম ও পেয়ারা যেমন আছে, তেমনি আছে আতা, পেঁপে, জাম্বুরা ও আমড়া। এছাড়া বারোমাসি বিভিন্ন প্রজাতির আম, কমলা, মাল্টা, ডালিম, লেবু, কুল বরই, পেয়ারা, সফেদা, পেঁপে, জাম্বুরা, আঙ্গুর, করমচা, আমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফল ও আখ। ফলের পাশাপাশি রয়েছে মরিচ, লাউ, করলা, ঢেঁড়স, শিম, লালশাক, কলমিশাক, পুঁইশাক, ধনিয়াসহ নানা রকমের সবজি। এ ছাড়া আছে জবা, গোলাপ, গাঁদা, অপরিজিতাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ।

কুষ্টিয়া শহরের একতারা মোড় এলাকার ছাদবাগানি আলমগীর কবির মিলন বলেন, ছাদে বাগান করার পরিকল্পনা থেকে কয়েক বছর আগেই বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ সংগ্রহ করতে থাকি। আমাদের বাগানে ফল ধরতে শুরু করলে এগুলো দেখতে বেশ ভালো লাগত।

তিনি আরও বলেন, এরপর ছাদে সবজি বাগান করি। ছাদে উৎপাদিত সবজি আমাদের বাসার সবজি চাহিদা অনেকটা পূরণ করে। বাজারে যে সবজি পাওয়া যায়, সেগুলো টাটকা নয়। আমার বাগানের সবজির স্বাদ বাজারে কেনা সবজি থেকে অনেক ভালো। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আমাদের ছাদে উৎপাদিত সবজি, ফল ও ফুল আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাড়িতেও উপহার হিসেবে পাঠাই। বিষয়টা বেশ ভালো লাগে।

শহরের থানাপাড়া এলাকার ছাদবাগান মাকিল মনিবর হোসেন বলেন, নিরাপদ ফল ও সবজি পাচ্ছি, পাশাপাশি ছাদবাগান থেকে প্রকৃতিতে সরবরাহ হচ্ছে অক্সিজেন। প্রতিটি ছাদবাগান হয়ে উঠেছে একেকটি অক্সিজেন চেম্বার। শৌখিনতার পাশাপাশি পরিবারের পুষ্টির চাহিদাও মিটছে।

শহরের হাউজিং এলাকার আরেক ছাদবাগান মালিক লিয়াকত আলী বলেন, পুরো প্রাকৃতিক উপায়ে সার, বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থবিহীন সবজি ও ফলের জন্য এবং বাজার থেকে যাতে সবজি বা ফল কিনতে না হয়, সেজন্য মূলত ছাদবাগান গড়ে তোলা হয়। দিন দিন পৃথিবীতে সবুজায়ন কমে যাওয়ায় অক্সিজেন কমছে। চারপাশে ইট-পাথরের কাঠামো গড়ে উঠছে। সবুজ এখন পাওয়াই যায় না। বলতে গেলে ছাদবাগান গড়ার পেছনে নিজের আঙিনায় সবুজ দেখার উদ্দেশ্যও রয়েছে। আমার কাছে মনে হয়, শহর বা গ্রামের প্রতিটি ছাদে ছাদবাগান গড়ে তুললে পৃথিবীর অক্সিজেনের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকবে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে।

মিরপুর পৌর এলাকার ছাদবাগানি সাফায়েত হোসেন অলক বলেন, আমার ছাদবাগানে প্রায় ৭০ প্রজাতির বিভিন্ন ফলের গাছ রয়েছে। এসব ফলের মধ্যে সবই বিদেশি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফল রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধক ফল করোচল। এছাড়া রয়েছে এভোকাডো, পিনাটবাটার, পিসফল, এগফ্রুট ইত্যাদি।

কুমারখালী পৌর এলাকার ছাদবাগানি শামীমা আক্তার বলেন, সময় কাটানোর জন্য কিছু তো একটা করতে হবে, যেজন্য ছাদে প্রথমে ফুলের বাগান করি। তারপর আস্তে আস্তে সবজির বাগান করি। এভাবেই আমার বাগানটা বিশাল আকৃতির হয়েছে। এখান থেকে আমি সতেজ সবজি লাউ, মিষ্টিকুমড়া, ঢেঁড়শ, পুঁইশাক, ধনিয়া পাতাসহ নানারকম ফলের গাছ থেকে ফল পাচ্ছি। বাগান পরিচর্যা করতে করতে আমার অবসর সময়টা ভালোই কেটে যাচ্ছে।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, ছাদবাগান যেমন প্রকৃতিতে অক্সিজেন সরবরাহে সহযোগিতা করছে, তেমনি যারা ছাদবাগান গড়ে তুলেছেন তারা বিষমুক্ত, সতেজ সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল ও ফুল উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদাও মেটাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি কুষ্টিয়া জেলায় ছাদবাগান বাড়াতে। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে কাজ করছেন। এর ফলে কুষ্টিয়া জেলা শহর ও উপজেলা শহরের ছাদবাগান বাড়তে শুরু করেছে। এখন জেলায় প্রায় ২০০ বাড়ির ছাদে বাগান হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকে ছাদবাগান সম্প্রসারণে বাগানিদের পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে।