Print Date & Time : 21 July 2025 Monday 4:08 am

কুষ্টিয়ায় বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার খাজানগরের মোকামে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে দেড় থেকে দুই টাকা। ভোক্তা পর্যায়েও বেড়েছে একই হারে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। গত ২০ অক্টোবর এ সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর। তবে শুল্ক কমানো হলেও চাল আমদানিতে আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। উল্টো চালের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে চালকল মালিকরা বলছেন, ধানের দাম মণপ্রতি বেড়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। যার কারণে চালের দাম বেড়েছে। চালের দাম নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে অসন্তোষ বেড়েছে। বিশেষ করে কুষ্টিয়ার পৌরবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে দেড় থেকে দুই টাকা করে।
শাপলা ট্রেডার্সের মালিক আশরাফুল ইসলাম জানান, গত তিন দিন ধরে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। তার দোকানে মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। যেখানে আগে ছিল ৬৮ টাকা। এছাড়া কাজললতা ৬৮ টাকা, বাঁশমতি ৯০ টাকা, মোটা চাল ৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এসব চাল কেজিতে বেড়েছে ২ টাকা করে। তবে সব থেকে বেশি বেড়েছে আটাশ চালের দাম। আটাশ চাল কেজিতে বেড়েছে ৪টাকা।

বিক্রেতা আশরাফুল জানান, বর্তমানে চালের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। নতুন ধানের চাল বাজারে রয়েছে। এ সময় সাধারণত চালের দাম বাড়ে না। তবে এই বিক্রেতা আগামীতে চালের দাম আরও বাড়তে পারে বলেও মনে করেন। তার দাবি চৈত্র মাসে মিনিকেট বা চিকনজাতীয় ধান বাজারে উঠবে। তা এখনও প্রায় ছয় মাস বাকি। এই লম্বা সময়ে আরও কয়েক দফা চালের দাম বাড়তে পারে। আরেক বিক্রেতা রনজুর রহমান নিশান জানান, চালের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ দেখছি না। অথচ সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে ২ টাকা করে। সরকার আমদানি শুল্ক কমালেও চালের দাম কমছে না। উল্টো বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

চালের দাম বৃদ্ধিতে চরম অস্বস্তি ভোক্তাদের মাঝে। দিনমজুর আরিফ ইসলাম জানান, এমনিতেই সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। তার ওপর নতুন করে বেড়েছে চালের দাম। শুনেছি নতুন সরকার চালের দাম কমাতে আমদানি শুল্ক কমিয়েছে কিন্তু তাতে কমার কোনো লক্ষণ দেখছি না। উল্টো নতুন করে বেড়েছে চালের দাম। তাতে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন জাহিদ হোসেন। নতুন করে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি জানান, দুই সপ্তাহ পর বাজারে এসেছি চাল কিনতে। এবার এসে দেখি চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ টাকা করে।

মিরপুর বাজারের চাল ব্যবসায়ী আরিফুল হক জানান, ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে সব ধরনের চালের দাম প্রকার ভেদে বস্তাপ্রতি ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ বিষয়ে চালকল মালিকদের ভাষ্য, ধানের দাম বেশি। মণপ্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে সব ধরনের ধানের দাম। বর্ধিত দামে কেনা ধানে চাল উৎপাদন করলে চাল বিক্রি করতে হবে ৩-৪ টাকা। সে তুলনায় চালের দাম সেই হারে বাড়ানো হয়নি। কেজিতে দুই টাকা করে বাড়ানো হয়েছে।
কুষ্টিয়া চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান জানান, বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে, তাই চালের দাম কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। বন্যা আর অতিবৃষ্টির কারণে চলতি আমন মৌসুমে ধানের ফলন খুব একটা ভালো হয়নি। যার কারণে চালের বাজারে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

কুষ্টিয়া চালকল মালিকদের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওমর ফারুক জানান, চলতি মৌসুমে চালের দাম খুব একটা বাড়ে না বরং কমে। কিন্তু এবার চালের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। কারণ বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ধানের উৎপাদন ভালো না হওয়ায় চালের বাজার আরও বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি।