কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া : ভোজ্য তেলের দাম বাড়ার কারণে কুষ্টিয়ায় বাড়তে শুরু করেছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। সয়াবিন তেলের তুলনায় কম কোলেস্টেরল এবং সহজেই চাষ-উপযোগী হওয়ায় সূর্যমুখী আবাদে বেশ আগ্রহী কৃষকরা। মাঠে আবাদের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় ও পতিত জমিতেও চাষ হচ্ছে এই তেলবীজের।
ভোজ্য তেল হিসেবে সয়াবিনের একক আধিপত্যের কাছে প্রায় হার মেনে কৃষকরা বিকল্প তেল উৎপাদনের পথে কিছুটা অগ্রসর হয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলে আগামীতে ভোজ্য তেল সয়াবিনের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সূর্যমুখী চাষ সম্প্রসারণের পাশাপাশি কৃষক পর্যায়ে তেল উৎপাদনের জন্য কল-কারখানা ও সরকারকে পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়ায় সূর্যমুখী আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৯০ হেক্টর জমিতে। তবে আবাদ হয়েছে ১৫২ হেক্টরে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৮ হেক্টর কম। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ৪২ হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ৬০ হেক্টর, মিরপুরে ৩৪ হেক্টর, ভেড়ামারায় ২২ হেক্টর, সদরে ২০ হেক্টর, কুমারখালীতে ১০ হেক্টর এবং খোকসায় ছয় হেক্টরের সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০২২-২৩ অর্থবছরে কুষ্টিয়ায় সরকারি প্রণোদনার আওতায় এক হাজার ৪০০ কৃষকের মাঝে বিনা মূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার বিতরণ করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলে আগামীতে ভোজ্য তেল সয়াবিনের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সূর্যমুখী চাষ সম্প্রসারণের পাশাপাশি কৃষক পর্যায়ে তেল উৎপাদনের জন্য কল-কারখানা ও সরকারকে পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
এদিকে আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন। তেল-জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক সহজ ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা এতে উৎসাহিত হয়ে উঠছেন।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মহদীপুর এলাকার চাষি মারজুল হোসেন বলেন, এ বছর এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাকে বীজ ও সার দিয়েছিল। তাছাড়া তারা সব সময় আমাকে চাষে পরামর্শ দিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় সূর্যমুখীর চাষ সহজ এবং খরচও কম। তেলের যে দাম তাই আমি এ ফসল চাষ করেছি। এটি আমাদের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া এক বিঘায় আমার তিন-চার হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। আশা করছি ২০-২২ হাজার টাকার সূর্যমুখী বিক্রি করতে পারব। সেই সঙ্গে নিজের জমিতে আবাদ করা তেলও খেতে পারব।
কৃষক বিশারত আলী জানান, সূর্যমুখীর চাষ তো প্রায় উঠেই গিয়েছিল। কিন্তু এ বছর মাঠে কয়েকজন চাষ করছে। সয়াবিন তেলের দাম ও সরষের তেলের যে দাম, কৃষক খাবে কী? তাছাড়া সূর্যমুখীর তেল সয়াবিনের চেয়ে উপকারী। তাই আস্তে আস্তে এর চাষ বাড়তে পারে।
মিরপুরের কৃষক ইউনুস আলী জানান, বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর তেল উৎপাদন করার সুব্যবস্থা থাকলে এর চাষ আরও বাড়বে। বীজ উৎপাদন করে যদি তেল তৈরি করতে না পারে, তাহলে তো কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন জানান, সূর্যমুখীর চাষ খুবই সহজ এবং এর রোগবলাই অন্য ফসলের তুলনায় অনেক কম। সূর্যমুখীর খৈল গরু ও মহিষের উৎকৃষ্ট মানের খাদ্য হিসেবে ব্যবহƒত হয়। এর বীজ ছাড়ানোর পর মাথাগুলো গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন কৃষকরা।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে সয়াবিন তেলের দাম বেশি হওয়ার পর থেকে কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
এদিকে স্থানীয় মিরপুর থানা কম্পাউন্ডে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। থানা কম্পাউন্ডের মধ্যে শোভা পাচ্ছে সূর্যমুখীর ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য।
কুষ্টিয়ার সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, সূর্যমুখীর গুণাগুণ অন্য ফসলের তুলনায় বেশি। কুষ্টিয়া অঞ্চলের মাটি সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য বেশ উপযোগী। বিগত বছরের তুলনায় কৃষকরা এ বছর সূর্যমুখী চাষে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন। কৃষি প্রণোদনার আওতায় আমরা বিনা মূল্যে কৃষকদের মাঝে সূর্যমুখীর বীজ ও সার বিতরণ করেছি। সেই সঙ্গে তেল-জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সরষে-সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ জানান, সরকারি প্রণোদনায় আমরা কৃষকদের সার-বীজ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করছি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সূর্যমুখী চাষে তাদের আগ্রহী করে তুলছি। আশা করি আগামীতে এর চাষ জেলাজুড়েই বাড়বে।