কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে গাজীপুরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা

প্রতিনিধি, গাজীপুর: গাজীপুর শিল্পাঞ্চল হিসেবে মানুষের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় বিভিন্ন উপজেলায় কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সোমবার দুপুরে গাজীপুর প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে প্রয়াস-একসেলেরেটিং লেপ্রোসী সার্ভিস প্রজেক্ট এ তথ্য জানিয়েছেন।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর জেলা সদরে ৭১ জন, টঙ্গীতে ১৯২ জন, কাপাসিয়ায় ৩০ জন, কালীগঞ্জে ৪ জন, কালিয়াকৈরে ০৫ জন ও শ্রীপুরে ৩০ জন কুষ্ঠ রোগী রয়েছে।

গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস এর মেডিক্যাল অফিসার ডা. হাবিবুর রহমান জানান, কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে সিভিল সার্জণ অফিস পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জেলার প্রতি উপজেলা ও ইউনিয়নে রোগির স্কিন উপসর্গ থেকে কুষ্ঠ রোগি খোঁজে বের করা হচ্ছে।

দ্য লেপ্রোসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর মেডিকাল অফিসার ডাক্তার পবণ রোজারিও বলেন, ২০১৬ সালের আগে গাজীপুরের কুষ্ঠ রোগী ছিলো শূন্যের কোঠায়। ২০১৬ সালের পরে সার্ভে অনুযায়ী গাজীপুরে মোট কুষ্ঠ রোগি রয়েছে ৩১৯ জন।

ফিল্ড ফ্যাসিল্যাটেটর বাবুল চন্দ্র রায় বলেন, কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে আমাদের সমাজে একটা ভ্রান্ত ধারনা আছে, তা আমাদেরকেই ভেঙ্গে দিতে হবে। কুষ্ঠ রোগ একটি মৃদু সংক্রামক রোগ, এ রোগ জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়, জীবণু হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়ায়, অধিকাংশ কুষ্ঠ রোগীই রোগের জীবণু ছড়ায় না। চিকিৎসা নিলে এ রোগ ভালো হয়। চিকিৎসা নিতে বিলম্ভ হলে হলে এ রোগে বিকলাঙ্গ হওয়ার যথেষ্ট সম্ভবনা থাকে। কুষ্ঠ রোগী আক্রান্ত ব্যাক্তিরা সমাজে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করার অধিকার রয়েছে।

টেকনিক্যাল সাপোর্ট অফিসার স্যামুয়েল সরকার জানান, আমরা সরকারের সাথে সম্বন্বয় করে কাজগুলো করি। সিভিল সার্জন অফিসে রিপোর্ট করি। ডকুমেন্টারী যা করি, তা ডিসি অফিসে জমা দেই। মূলত উপজেলা পর্যায়ে এ রোগীর চিকিৎসা হয়। গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিসে রোগী আসলেও এটা উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল গুলোতে প্রেরণ করি। ২০২২ সালে বাংলাদেশে কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা ২৯২৮ জন।

ডা. রোজারিও বলেন, এটা একটা প্রাচীন রোগ। ১৮৭৩ সালে ড. হ্যান্ডস্যান প্রথম এ রোগের জীবণু আবিস্কার করেন। এটা এখনো সামাজের মানুষের জন্য আতংক। এ রোগ হলে সমাজে কেউ প্রকাশ করতে চায়না। বিশেষ করে নারীরা এ রোগ একেবারেই প্রকাশ করতে চায় না। পৃথিবীতে একটা সময় এ রোগ হলে মানুষকে নির্বাসনে দেওয়া হতো। ভারতে প্রথম মি. ভ্যালি এ রোগ নিয়ে কাজ করেন। বাংলাদেশের ৪ টা পদ্ধতিতে কাজ করে থাকি। কুষ্ঠ রোগী চিহ্নিত করণ, পূণর্বাসন করণ, অ্যাডভোকেসি ও প্রান্তীক জনগোষ্ঠী সাথে ওয়ার্কসপ।

তিনি বলেন, চিকিৎসায় কুষ্ঠ রোগ শতভাগ ভালো হয়। সমাজে কুসংস্কার রয়েছে, এ রোগ ভালো হয়না। সমাজ থেকে এ কুসংস্কার দূর করতে হবে। এই রোগটা হলো, একটা নার্ভাস সিস্টেম রোগ। প্রথমে স্কিনে দাগ হয়, বিভিন্ন কালারের দাগ হয়। দাগ থাকলে বোধ শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। দাগে কোনো চুলকানি থাকেনা। অন্য কোনো রোগে দাগ হলে চুলকানি থাকে বা ব্যাথাও থাকে।

তিনি জানান, এই রোগের কোনো ভ্যাকসিন নেই। এটা মৃদু রোগ। কারো শরীরে এটা ক্যারি করলে, সেই পরিবারের আরেকজনের হতে পারে। একটা মাত্র কুষ্ঠ রোগের ‍পূণবাসন কেন্দ্র রয়েছে, যা গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বান্দা বাড়ীতে। ওখানে এখনো কিছু কুষ্ঠ পরিবার রয়েছে। সেখানে প্রতিবন্ধী রোগির সংখ্যা বেশি রয়েছে। তিনি বলেন, এ রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত না হলে পড়ে এটা বেড়ে যায়।

সংগঠনটি জানায়, ২০২৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাথে একটি সভা হয়, সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ২০৩০ সালে কুষ্ঠে রোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে।এখানে মানুষের ঘনত্ব বেশি। বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ কাজ করছে। টঙ্গীতে রোগি সংখ্যা খুব বেশি। গাজীপুর কুষ্ঠ রোগীদের জোন। এটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এড়িয়া।আমাদের ধারনা আরো অনেক বেশি রোগি রয়েছে। কুষ্ঠ রোগির ক্ষেত্রে ২ ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করি।স্কিন ফিল্ড ক্যাম্পিং এবং গোপনীয়তায় ৪০ পরিবারে পরীক্ষা করে বের করি।বাংলাদেশের ৩৪ টি জেলায় আমাদের কাজ করেছ।

গাজীপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহতাব উদ্দীন বলেন, জনসচেতনতায় কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে তিন মাস অন্তর অন্তর সভা করার আহবান জানায়।