নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদেশি মিশন ও কূটনীতিকদের মৌলিক নিরাপত্তায় বাংলাদেশ কোনো আপস করবে না বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূত যারা আছেন, তাদের মৌলিক যে নিরাপত্তা, তা নিশ্চিতে কখনোই আমরা কমপ্রোমাইজ করব না। এটুকু আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকায় বিদেশি মিশনগুলোর কোনো রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনারকে বাড়তি প্রটোকল সুবিধা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, আমি মার্কিন দূতাবাস বা এর কর্মীদের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিশদ বিবরণে কথা বলতে চাচ্ছি না। কিন্তু আমি উল্লেখ করতে চাই, কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে, যে কোনো দেশকে অবশ্যই সব কূটনৈতিক মিশন প্রাঙ্গণ ও এর কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে চলতে হবে এবং কর্মীদের ওপর কোনো আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য কার্যকর সব পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের কূটনৈতিক কর্মী এবং স্থাপনার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বেদান্ত প্যাটেলের ভিয়েনা কনভেনশন-সংক্রান্ত মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ভিয়েনা কনভেশনে যে বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছে, স্বাগতিক দেশ হিসেবে আমরা অবশ্যই সেগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং অবশ্যই মেনে চলব।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর জঙ্গিবাদের উত্থানের বিবেচনায় বিষয়টা (বাড়তি প্রটোকল) দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে দেখা গেছে, এটা মূলত ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্সের কাজটাই করত। তাদের আসল যে নিরাপত্তার বিষয়টা, সেটা কিন্তু অপরিবর্তিত আছে। নিরাপত্তার দিকে থেকে আমরা অন্তত ঘাটতি দেখতে পাচ্ছি না।
কূটনীতিকদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা না দেয়ার সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এখন আমরা ঢাকা শহরে বা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বা যা-ই বলি না কেন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত রয়েছে এবং আমাদের ল’ অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে। সেটা একটা কারণ। দ্বিতীয়ত, আমাদের পুলিশ শর্টেজ রয়েছে। রেশনালাইজ করার একটা বিষয় রয়েছে। আপনারা বলতে পারেন সময়টা, এখন কেন? কোনো না কোনো সময় তো করাই যেত। এটা এমনিতেই করা হতো।
তিনি বলেন, আর একটা কারণ হচ্ছে, আমরা বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছি। স্পেশাল ব্যাটালিয়ান অব আনসার রয়েছে। তাদের অনেক দিন ধরে তৈরি করা হচ্ছিল।
কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দিতে গেলে আনসারকে অর্থ দিতে হবে কি নাÑজানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, কোনো দেশে ফ্রি দেয়া হয় না। সামান্য পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকতে পারে।
কূটনীতিকদের গাড়িতে পতাকা ওড়ানো বন্ধ করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি। নিউইয়র্ক বা জেনেভায় সেখানে কখনোই পতাকা ওড়ানোর কোনো পদ্ধতি নেই। অনেক দেশে আছে, রাষ্ট্রীয় যত মিটিং হয় তখন আপনি পতাকা উড়িয়ে যেতে পারবেন। কিছুটা এটা নিজের ওপর থাকে।
রাষ্ট্রদূত থাকার সময়ে অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, আমি নিজে রাষ্ট্রদূত ছিলাম। যখন ইতালি ও জাপানে ছিলাম, আমি তো পতাকা উড়িয়েছি। কিন্তু আমি যদি বাজারে যাই, কলিগের বাসায় ব্যক্তিগত দাওয়াতে যাই, তখন তো আমি পতাকা ওড়াব না। রাষ্ট্রদূতদের এটা সেন্সÑকী করা উচিত, কী করা উচিত নয়।