নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছরের মাইলফলক পালন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। চিঠিতে আগামী ৫০ বছরে ওয়াশিংটন ও ঢাকার মধ্যে অংশীদারত্ব আরও বাড়ানোর ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের অংশিদারিত্ব আগামী ৫০ বছর এবং তারপরও অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর দেশ পুনর্গঠনে এবং বর্তমানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে বাংলাদেশিদের কর্মশক্তি, উর্বর মস্তিষ্ক ও উদ্ভাবন অবশিষ্ট বিশ্বের কাছে একটি মডেল হিসেবে কাজ করে। উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সন্ত্রাসবাদ দমনের বিষয়ে আমাদের অংশীদারিত্ব নিয়ে আমরা গর্ব করি।’
তিনি আরও বলেন, এ দুই দেশ জলবায়ু সংকট মোকাবিলা, গণহত্যার হাত থেকে রোহিঙ্গাদের প্রাণ বাঁচাতে সহায়তা এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি রক্ষার সমর্থনে একসঙ্গে কাজ করে। বাংলাদেশি নাগরিক ও আমেরিকানরা গণতন্ত্রের আদর্শ, সমতা ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর বিষয় একইভাবে শেয়ার করেন। এসব একটি ভালো, নিরাপদ ও সমৃদ্ধিশালী সমাজের ভিত্তি।
বাইডেন বলেন, ১৯৫৮ সাল থেকেই এই দুই দেশ শিক্ষা ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ওই সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত ৩০ দিনের এক মতবিনিময় কর্মসূচিতে অংশ নেন।
বাইডেন বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও নেভি হচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অবাধ চলাচল ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে মূল্যবান অংশীদার। তারা মানব ও অবৈধ মাদকপাচার বন্ধে আঞ্চলিক প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে অবদান রাখছে।
বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ মহামারি কভিড-১৯ মোকাবিলায় একত্রে কাজ করে এবং ওয়াশিংটন ঢাকাকে ৬১ মিলিয়নেরও বেশি ভ্যাকসিন ডোজ ও ১৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের বেশি আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে।
এদিকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের পাঁচ দশক উদ্যাপনে আপনাদের সঙ্গে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। ৫০ বছর পর আমাদের দুটি দেশের সম্পর্ক আমাদের জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দশকগুলোয় আমাদের জনগণ একসঙ্গে আরও কী করতে পারে, সেটা দেখার প্রতীক্ষায় রইলাম।’
১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিনেটর টেড কেনেডির বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সিনেটর টেড কেনেডি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং আমাদের দুদেশের জনগণের বন্ধন, স্বাধীনতার প্রতি আমাদের অনুরূপ সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও স্বাধীনতার পথ অনুসরণ করে আমাদের যাত্রার কথা তুলে ধরেন।’
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্য বেশি ক্রয় করেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে যেকোনো দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্য বেশি ক্রয় করেছে, যার মূল্যমান প্রায় ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। আমাদের শক্তিশালী অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করতে আমরা বাংলাদেশকে শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে অগ্রগতি সাধনে উৎসাহিত করি।’
ভিডিও বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন ও রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় দেশটির সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করছি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এবং আরও মারাত্মক ঝড়ের কারণে এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জনপদের সহিষ্ণুতা জোরদার করছি। এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর এর সমাধানে আমরা কাজ করে আসছি।’