কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করুন

শিল্পে এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশ এখনও কৃষিনির্ভর। শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, রাস্তা তৈরি ও  প্রশস্তকরণ, বাড়িঘরসহ অবকাঠামো নির্মাণ এবং নদীভাঙনে আবাদি জমি কমেই চলেছে। এর মধ্যে লোকসংখ্যা অনেক বেড়ে গেলেও আমাদের কৃষক শস্য উৎপাদনে সাফল্যের পরিচয় দিয়ে চলেছে। কিন্তু ‘সব সাধকের বড় সাধক’ এ কৃষক বরাবরই বিভিন্নভাবে বঞ্চিত। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য তারা পান না। আবার প্রয়োজনের সময় বেশি দাম দিয়ে খাদ্যশস্য কিনতে হয় তাদের।

গতকাল শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঠাকুরগাঁওয়ে আলুর ফলন বাড়লেও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষক। হাটবাজারে উঠতে শুরু করেছে নতুন আলু। শুরুতে ভালো দাম থাকলেও এখন দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। আলুর বাজারদর কম হওয়ায় তাদের লোকসান গুনতে হতে পারে।

উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পান না আমাদের কৃষকরা। এখন মৌসুমে তারা কম দামে বিক্রি করেন। আড়তদার ও হিমাগার মালিকরা কম দামে কিনে মজুত করেন। পরে বেশি দামে বিক্রি করেন তারা। কৃষক  বেশি দাম পাওয়ার অপেক্ষা করতে পারেন না। আলু সহজে পচনশীল। বেশি দিন ঘরে মজুতও রাখতে পারেন না। কৃষকের উৎপাদিত ফসলের সুবিধাভোগী হন মধ্যস্বত্বভোগীরা। 

‘ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাগডাশে’ বহুল প্রচারিত প্রবাদটি অনেকের জানা। এর অর্থ, শুভঙ্করের ফাঁদে সরল মানুষের কষ্টার্জিত সম্পদ গরল মানুষের ভোগের জন্য ব্যবহƒত হয়। একসময় বড় নৌকায় করে মাঝিমাল্লা নিয়ে উজান-ভাটিতে ধান কাটতে যেতেন বেপারিরা। কঠোর শ্রমের বিনিময়ে ধানের একাংশ দিয়ে নৌকাবোঝাই করে দেড়-দুই মাস পর বাড়ি ফিরতেন তারা। পুঁজি, নৌকা ও বেপারির অংশ বাদ দিয়ে গরিব মাল্লাদের বণ্টন করা হতো। দায়দেনা পরিশোধসহ কয়েক দিন যেতে না যেতেই ফুরিয়ে যেত ধান। এখনও দাদন ব্যবসায়ী সুদখোর মহাজনের দ্বারা প্রতারিত হন গরিব কর্মজীবী, মৎস্যজীবীরা। তা বোঝাতে এখনও উপরিউক্ত প্রবাদ ব্যবহার করা হয়।

একই অবস্থা ঠাকুরগাঁওয়ের আলুচাষিদের। ন্যায্য দাম না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। মাঝেমধ্যে কৃষকের উৎপাদন খরচও ওঠে না। কৃষি প্রকৃতিনির্ভর একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। প্রতিকূল আবহাওয়ায় ফসলের ফলন কমে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক। এখন রাষ্ট্রের উদাসীনতায়  তারা প্রবঞ্চিত না হন। সমন্বয়হীনতার কারণে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না করে রাস্তায় ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছেন কৃষকÑএমন দৃষ্টান্তও রয়েছে।

কৃষককে শুধু প্রণোদনা হিসেবে ঋণ দিলেই হবে, উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। কৃষক যাতে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পান, সে লক্ষ্যে সময়োপযোগী কর্মকৌশল প্রণয়ন করতে হবে। ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধ হয়ে যাতে কৃষকদের বেকায়দায় না ফেলতে পারে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, উৎপাদিত ফসলের দাম বাড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন না কৃষক। ফলে মৌসুমে কম দামে ও মৌসুম শেষে কৃষক যখন অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তখন বেশি দামে কিনতে হয় কৃষককে। তাই কৃষকদের সুরক্ষায় খেয়াল রাখতে হবে, আড়তদাররা যাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।