কৃষিঋণ বিতরণ কমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণ কমেছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ দশমিক ২৬ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। অথচ চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বিতরণ করা হয়েছে ৮৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের তুলনায় কৃষিঋণ বিতরণ কমেছে ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ১৭ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছর সরকারি ব্যাংকগুলোর জন্য ৯ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত এ খাতের ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে আট হাজার ২৯৪ কোটি টাকা, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৮৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গত অর্থবছর এসব ব্যাংকের জন্য নির্ধারিত ৯ হাজার ২৯০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৮৭ দশমিক ১৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল।
এদিকে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর জন্য এবারে ১০ হাজার ৮১০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৯ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৮৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে এ খাতের ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেশি কৃষিঋণ বিতরণ করেছিল।
আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু কৃষিঋণই নয়, সব ধরনের ঋণ দিতেই ব্যাংকগুলো এখন অনীহা প্রকাশ করছে। গতবছরের শেষের দিকে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ অনেক বেড়ে যায়। প্রায় ২০ থেকে ২৫টি ব্যাংকের এডি রেশিও (ঋণ-আমানত অনুপাত) নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে। মূলত আগ্রাসী ঋণ দিয়ে অধিকাংশ ব্যাংক আগেই টাকা শেষ করে ফেলেছে। ফলে নতুন বছরে এসে ব্যাংকগুলোতে চরম আকারে তারল্য সংকট দেখা দেয়। এডিআর হার কমিয়ে ঋণেও লাগাম টানে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে অধিকাংশ ব্যাংকের কাছেই ঋণ দেওয়ার মতো এখন পর্যাপ্ত টাকা নেই। তাই তারা এখন ক্ষেত্রবিশেষে যাচাই-বাছাই করে ঋণ দিচ্ছে। এ কারণেই কৃষিঋণ বিতরণ কমেছে। এছাড়া সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে সুদহার বাড়লেও কৃষি খাতে ৯ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকায় ঋণ বিতরণে অনীহা দেখাচ্ছে অনেক ব্যাংক।
এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান চৌধুরী সম্প্রতি শেয়ার বিজকে বলেন, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা এখন বেশ কড়াকড়ি আরোপ করেছি। কাউকে ঋণ দিলে ভালো করে যাচাই-বাছাই করে ঋণ দিচ্ছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ঋণ দেওয়া নয়, ব্যাংকগুলো এখন আমানত সংগ্রহেই ব্যস্ত। আমানত সংগ্রহে ব্যাংকগুলোর মধ্যে এখন প্রতিযোগিতা চলছে। কিছু কিছু ব্যাংক ডাবল ডিজিটে অর্থাৎ ১০ শতাংশের ওপরে আমানত নিচ্ছে। অন্যদিকে ঋণের সুদহারও অনেক বেড়ে গেছে। যদিও তারল্য সংকট সমাধানে সিআরআর (নগদ জমা সংরক্ষণ) হার এক শতাংশ কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এর প্রভাব এখনই পড়বে না। ঋণের সুদহার কমতে আরও সময় লাগবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট কখনোই ছিল না। কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে হয়তো ছিল। কৃষিঋণ বিতরণ কমার একটি কারণ হতে পারেÑবাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়, তারা সেই লক্ষ্যমাত্রা ঠিকভাবে পূরণ করে না।
প্রসঙ্গত, গত অর্থবছরে কৃষিতে ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করে ২০ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা, যা ছিল ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। অথচ চলতি অর্থবছর কৃষি খাতে ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে। আগের অর্থবছরের প্রকৃত বিতরণের তুলনায় এবারে লক্ষ্যমাত্রা কম রয়েছে।