কৃষি যান্ত্রিকীকরণের সুফল পাচ্ছে কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের কৃষি ব্যবস্থায় যান্ত্রিকীকরণ প্রক্রিয়া অর্থনীতিতে বড় সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। কৃষিতে যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি, ফসল সংগ্রহোত্তর অপচয় হ্রাস, শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য পেতে শুরু করেছে কৃষক। তবে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা, সাধারণ কৃষকদের মাঝে যন্ত্র ব্যবহারের প্রসারতা বৃদ্ধি না পাওয়া এবং ফসল চাষে যন্ত্রের ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে প্রচারণা কম থাকাসহ নানা কারণে এখনও আধুনিক যন্ত্রনির্ভর হতে পারেনি কৃষি খাত।

জলবায়ু পরিবর্তন তথা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের কোনো বিকল্প নেই। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে এরই মধ্যে ২৮৪টি কৃষি প্রকৌশল পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প’ শীর্ষক চলমান একটি প্রকল্প কাজ করছে। প্রকল্পের আওতায় কম্বাইন হারভেস্টারসহ, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, সিডার ও রিপার মেশিনের ব্যবহারে আগ্রহ সৃষ্টি করছে। স্থানীয় পর্যায়ে ট্রান্সপ্লান্টার ব্যবহার-উপযোগী ধানের চারা উৎপাদনে উদ্যোক্তা তৈরি সাহায্য করছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশে প্রায় ৬২ শতাংশ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে কৃষি-সম্পর্কিত বিভিন্ন সেক্টরে, যার মধ্যে শস্য খাতেই রয়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। কৃষি আমাদের জাতীয় অর্থনীতির জীবনীশক্তি। দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪২ দশমিক ৬২ শতাংশ কৃষিক্ষেত্রে নিয়োজিত।

মৌসুমের সময় কৃষিশ্রমিক পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ও কম্বাইন হারভেস্টারসহ সব ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোর বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে এরই মধ্যে টেকসই কৃষি ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য এ প্রকল্পটি হাতে নেয়। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা।

উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি তহবিলের (জিওবি) মাধ্যমে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সূত্র জানায়, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও ব্যবহার বৃদ্ধি করছে। কৃষকের খরচ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে ১২ ক্যাটেগরির কৃষি যন্ত্রপাতি। হাওর ও উপকূলীয় অঞ্চলে ৭০ শতাংশ এবং সমতলে ৫০ শতাংশ ভর্তুকির মাধ্যমে বিতরণ করছেন এসব যন্ত্রপাতি। ১২ ক্যাটেগরির মধ্যে কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার ও রিপার বাইন্ডার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, মিডার, বেড প্লান্টার, পাওয়ার থ্রেসার, মেইজ শেলার, পাওয়ার স্প্রেয়ার, পাওয়ার উইন্ডার, ড্রয়ার, পটেটো ডিগার ও পটেটো চিপস যন্ত্র।

এরই মধ্যে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় মোট ২৮ হাজার আধুনিক কৃষিযন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে বলে জানা যায়, যার মধ্যে কম্বাইন্ড হারভেস্টার ৯ হাজার। চলমান এই প্রকল্পে কম্বাইন্ড হারভেস্টার ব্যবহার করে কৃষক এক মৌসুমে রোপা আমন ধান কর্তন করেছে, যার ফলে কৃষকের অর্থ সাশ্রয় হয়েছে এক হাজার ১১৯ কোটি টাকার অধিক। বোরো চাষে কৃষকের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে মনে করছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গত পাঁচ বছরে শুধু কম্বাইন হারভেস্টারে অর্থ সাশ্রয়ের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রকল্প হিসেবে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যন্ত্রিকীকরণ প্রকল্প অগ্রগণ্য হিসেবে কাজ করছে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক তারেক মাহামুদুল ইসলাম বলেন, সমন্বিত ব্যবস্থাপনা বা  আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনায় যেমন সম্ভাবনা রয়েছে, তেমন প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। কম্বাইন হারভেস্টার বা রাইস ট্রান্সপ্লান্টার বিকল হলে তা সহজে কার্যক্ষমতায় আনতে পারি না। চালক, দক্ষ টেকনিশিয়ান ও সহজলভ্য যন্ত্রাংশের অভাব রয়েছে।