শেয়ার বিজ ডেস্ক:রাশিয়া কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য রপ্তানি চুক্তির মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়িয়েছে। ইউক্রেনের কৃষিপণ্য বাধাহীনভাবে রপ্তানির সুযোগ করে দিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া। খবর: রয়টার্স।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেক্সান্দার গ্রুশকো। তিনি বলেছেন, শেষ পর্যন্ত চুক্তিটির মেয়াদ বেড়েছে। মেয়াদ ৬০ দিন বাড়ছে বলে সমঝোতা হয়েছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার হামলা শুরুর পর ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। তখন বিশ্ববাজারে শস্যের সরবরাহ কমায় দাম আকাশচুম্বী হয়। সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেয় জাতিসংঘ ও তুরস্ক। তাদের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির সুযোগ দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করা হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্কে গত বছরের ২২ জুলাই জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য রপ্তানি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ায় ইউক্রেনের বন্দরগুলো থেকে লাখ লাখ টন শস্য ও খাদ্যপণ্য বিশ্বের বিভিন্ন অংশে যেতে পারছে।
এ চুক্তিটি ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ (বিএসজিআই) নামে পরিচিত। এটি ইস্তাম্বুল শস্য চুক্তি নামেও পরিচিতি পায়। দুই দেশের প্রতিনিধিত্বকারী দুজন এক টেবিলে না বসে চুক্তিতে পৃথকভাবে সই করেন বা পাশে সই করছেন ইউক্রেনের অবকাঠামো বিষয়ক মন্ত্রী ওলেকসান্দার কুবরাকভ। তার অপর পাশে তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হালুসি আকার। আর মাঝে ছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এমনকি অনুষ্ঠানে দুই দেশের পতাকাও পাশাপাশি ছিল না।
এ চুক্তির ফলে কৃষ্ণসাগরীয় বন্দরগুলো দিয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির সুযোগ উšে§াচিত হয়। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এ চুক্তির আওতায় ইউক্রেন থেকে ২ কোটি ৪১ লাখ টনের বেশি শস্য রপ্তানি করা হয়েছে।
তবে মস্কোর অভিযোগ, বিএসজিআই চুক্তির মূল সুবিধাভোগী ইউরোপের দেশগুলো। কেননা ইউক্রেন থেকে রপ্তানি করা শস্যের বেশিরভাগ গেছে এ অঞ্চলের দেশগুলোয়। অপরদিকে, গরিব ও অনুন্নত দেশগুলো এ শস্যের ভাগ খুব কমই পেয়েছে।
রাশিয়া গত সোমবার চুক্তিটির মেয়াদ আগের বারের তুলনায় অর্ধেক বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল। এদিন জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ বিষয়ে নিজেদের মতো জানায় মস্কো। রাশিয়া আরও জানায়, বিদ্যমান চুক্তিটির মেয়াদ আরও বাড়ানোর আগেই দেশটি এ বিষয়ে বাস্তব অগ্রগতি দেখতে চায়। অপরদিকে জাতিসংঘ চুক্তির স্থায়িত্ব অটুট রাখতে সম্ভব সব কিছু করার অঙ্গীকার করেছিল।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বিভিন্ন খাতে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নির্দিষ্ট করে কৃষিপণ্য রপ্তানিকে লক্ষ্য করে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। কিন্তু আর্থিক লেনদেন, সরঞ্জাম ও বিমা খাতে থাকা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার শস্য ও সার রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য রপ্তানির মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় রাশিয়া প্রায়ই এ যুক্তি হাজির করে তাদের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা শিথিলে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর শস্য রপ্তানি শুরু করে ইউক্রেন। তবে নৌবহরে ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া চুক্তি থেকে সরে যাওয়ায় তা আটকে যায়।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানির চুক্তির মেয়াদ এক দফা বাড়ানো হয়েছিল। আগামী ১৮ মার্চ এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার আগে চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করে জাতিসংঘ। এতে এবার ৬০ দিনের জন্য এ চুক্তির মেয়াদ বাড়াল মস্কো। এ বিষয়ে রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ভারশিনিন বলেন, ব্ল্যাক সি ইনিশিয়েটিভের মেয়াদ ৬০ দিনের জন্য বাড়ানো হবে। তবে পরবর্তী সময়ে এটি প্রতিশ্রুতি নয়, বরং কাজের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে।
প্রসঙ্গত বিশ্বে মোট গম রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। ইউক্রেন বিশ্বের চতুর্থ খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্বের ৪২ ভাগ সূর্যমুখী তেল উৎপাদিত হয় দেশটিতে। এছাড়া মোট ভুট্টার ১৬ শতাংশ ও গমের ৯ শতাংশ উৎপাদন করে দেশটি।