Print Date & Time : 18 August 2025 Monday 8:15 pm

কেজিতে প্রতিদিন ৩ টাকা করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত মাসের মাঝামাঝি প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। কিন্তু মাসের শেষের দিকে এসে এটি ১০০ টাকায় দাঁড়ায়। এরপর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ১০৫ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে ছিল। গতকাল এক লাফে কেজি হয়ে যায় ১২০ টাকা। আজ গিয়ে ঠেকেছে ১৩০ টাকায়। ফলে দেখা গেল মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ টাকা। গড়ে প্রতিদিন বেড়েছে ৩ টাকার বেশি।

গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ একেবারেই শেষের দিকে হওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে বাজারে। তাই এই দাম বাড়ার প্রবণতা আরও কয়েক দিন থাকবে। এরপর হালি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করলে দাম অনেক কমে যাবে।

হঠাৎ পেঁয়াজের এমন বাড়তি দামের বিষয়ে বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারেই পেঁয়াজের দাম গতকাল থেকে বাড়তি যাচ্ছে। গতকাল কারওয়ান বাজারে দাম পড়েছে প্রতি কেজি ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। এরপর আছে পরিবহন খরচ, রাস্তা খরচ, দোকান খরচ। সব মিলিয়ে আজ পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকায় খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কেনা পড়ত ৮০-৮৫ টাকা,  তখন আমরা খুচরা দোকানে ১০০-১০৫ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু গতকাল থেকে দাম বেড়ে যাওয়ায় আর পারছি না।

মগবাজার এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলম বাজার করতে গিয়ে পেঁয়াজের দাম শুনে নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, ৩-৪ দিন আগেই পেঁয়াজ কিনলাম ১০০ টাকা কেজি। আজ দেখছি ১৩০ টাকা। তিন দিনের মধ্যে এক লাফে ৩০ টাকা বেড়ে গেল আর সরকার কিছুই করল না!

তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে এভাবে যখন-তখন পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেবে অথচ বাজার তদারকি, মনিটরিং থাকবে না, এটা কেমন কথা? আমরা কি সবসময় অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে হার মানতে থাকব?

পাবনা থেকে পাইকারি দরে পেঁয়াজ কিনে ঢাকায় খুচরা বিক্রি করেন আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে পাবনাতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারি কেনা পড়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, সেই পেঁয়াজ রাজধানীতে খুচরা বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি। আগের সপ্তাহে সেখানে প্রতি মণ (৪০ কেজি) পেঁয়াজ কেনা পড়ত ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা, বর্তমানে সেটা পড়ছে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৯০০ টাকা।

তিনি আরও বলেন, নতুন পেঁয়াজ বা মুড়িকাটা কৃষকের পেঁয়াজ তোলা শেষের দিকে। প্রায় দেড় মাস আগে এই পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছিল, এখন কৃষকের সেই পেঁয়াজ শেষের দিকে। ফলে সরবরাহ কমতে শুরু করেছে, আর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ না থাকায় হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এখন কৃষকের মূল পেঁয়াজ তথা হালি পেঁয়াজ যেটা বছরজুড়ে পাওয়া যায় সেই পেঁয়াজ উঠতে কিছুদিন সময় লাগবে। সে পর্যন্ত এমন বাড়তি দাম থাকতে পারে বাজারে।

অন্যদিকে মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকার খুচরা বিক্রেতা মুদি দোকানি হালিম উদ্দিন বলেন, কারওয়ান বাজারসহ অন্যান্য পাইকারি বাজারে প্রতি পাল্লার (৫ কেজিতে এক পাল্লা) দাম পড়ে যাচ্ছে ৫২৫ থেকে ৫৫০ টাকা। সেই পেঁয়াজ পরিবহন খরচ দিয়ে এনে অন্যান্য সব খরচের হিসাব করে প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করছি। আমরা যখন পাইকারি বাজারে বেশি দামে কিনে আনি, তখন আমাদের খুচরা দোকানে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়। যখন পাইকারি বাজারে কম দামে পেতে শুরু করব, তখন আবার কম দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করব।

ট্রেডিং করপোরেশনের অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন তালুকদার জানিয়েছেন, গতকাল বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১২০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৯০ টাকা আর এক মাস আগে ছিল ৮৫ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু গত বছর এই সময়ে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে।