কোনো ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো কর্মকর্তার আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকতেই পারে। তা দোষের কিছু নয়, এটি বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ও নয়। কিন্তু আত্মীয়তার পরিচয়ে অনৈতিক সুবিধা নেয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। সেটিই ঘটেছে যমুনা ব্যাংকে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অথরাইজড ডিলার (এডি) লাইসেন্স স্থগিত থাকাকালে বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেন করেছে ব্যাংকটি এবং এ সুবিধা নেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নরের ভাইয়ের নাম ভাঙিয়ে।
দুঃখজনক হলো, এ অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য বড় ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি যমুনা ব্যাংককে। কারণ ওই সময়ে যমুনা ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন সাবেক গভর্নর ফজলে কবিরের ছোট ভাই সালেহ কবির।
জানা যায়, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সালেহ কবির নিজেও। বাংলাদেশ ব্যাংক জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিতে বললেও সালেহ কবিরের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়নি যমুনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ২০১২ সালে ‘ভুয়া’ রপ্তানি বিলের বিপরীতে যমুনা ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে গ্রাহক ও কর্মকর্তার যোগসাজশে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। এ ঘটনা প্রমাণিত হলে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট ওই শাখার এডি লাইসেন্স এক বছরের জন্য স্থগিত করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পরে ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এক মাসের মধ্যেই তাদের সীমিত পরিসরে বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেনের সুযোগ দেয়া হয়।
দুর্বল ব্যাংকগুলো সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ পর্যবেক্ষণ করছে। গত ৪ আগস্ট সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বর্তমান গভর্নর জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোকে সাবলীল করে তোলাই তাদের লক্ষ্য। কারণ একটা ব্যাংক খারাপ করলে, তার প্রভাব আরেকটা ব্যাংকের ওপর পড়বে।
যত দূর জানা গেছে, বড় ধরনের শাস্তি না দিয়ে অনিয়মে জড়িত সংশ্লিষ্ট তিন বিভাগের প্রধান এবং এর সঙ্গে যারা জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যমুনা ব্যাংককে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেখা যায়, জড়িতদের মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় যমুনা ব্যাংক। তাদের এক বছরের জন্য বার্ষিক ইনক্রিমেট স্থগিত করা হয়। তবে ব্যাংকিং/ব্রাঞ্চ অপারেশনস ডিভিশনের (বিওডি) হেড সালেহ কবিরের বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার প্রমাণ মেলেনি। এছাড়া এমন কর্মকাণ্ডের জন্য যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর অদক্ষতা ও দুর্বলতাকে দায়ী করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অবশ্য যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা এমডি আমাদের প্রতিবেদককে বলেছেন, এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের সমাধান হয়ে গেছে।
এটি স্বীকার করতে হবে, এটি দ্বিপক্ষীয় বিষয় নয়। একটি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলে অন্য ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান সতর্ক হতো। লাইসেন্স স্থগিত থাকাকালে বৈদেশিক বাণ্যিজিক লেনদেন সম্পন্ন করার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অপরাধের জন্য যমুনা ব্যাংকের দিলকুশা শাখার এডি লাইসেন্স আবার বন্ধ করতে পারত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি তা করেনি। এক ব্যাংকের প্রভাব আরেক ব্যাংকের ওপর পড়ে, এ বিষয় বিবেচনায় রেখে কারও প্রতি শিথিল হওয়ার সুযোগ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্তাদের নাম ব্যবহার করে নতুন করে যাতে অনিয়ম সংঘটিত না হয়, সে লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।