ডা. ইসরাত জাবীন : রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া হলো রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া। রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরির কাঁচামাল আয়রন কমে গেলে আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা হতে পারে। নারীদের রক্তশূন্যতার অন্যতম প্রধান কারণ শরীরে আয়রনের অভাব। প্রতিমাসেই ঋতুস্রাবের ফলে ৩০ থেকে ৮০ মিলিলিটার রক্ত বেরিয়ে যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে এর মাত্রা অনেক বেশি হয়, আবার স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলে। ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় আয়রনের চাহিদা বেড়ে যায়। যদি এই অতিরিক্ত পুষ্টির চাহিদা পূরণ না হয়, তাহলে মা ও শিশু দুজনের জন্যই স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। এ ছাড়া অপুষ্টি, কৃমি সংক্রমণ, দীর্ঘ মেয়াদে ব্যথার ওষুধ সেবনে পাকস্থলীতে ক্ষত, জরায়ুর টিউমার, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ, পাইলসসহ নানা কারণে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি হয় এবং তা সাপ্লিমেন্ট হিসেবে খাওয়া উচিত। ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায় সবুজ ও রঙিন শাকসবজিতে। আমাদের দেশের অনেক নারী জানেন না, তাদের মৃদু ধরনের জিনগত রক্তরোগ যেমন থ্যালাসেমিয়া বা হিমোগ্লোবিনই ট্রেইট আছে কি না। তাদের জীবনভর হিমোগ্লোবিন একটু কম থাকে। হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস নামে পরীক্ষা করলে তা শনাক্ত করা যায়। অতিরিক্ত দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধ, ত্বক ও ঠোঁট ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠা, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা বা শ্বাসকষ্ট হওয়া প্রভৃতি রক্তশূন্যতার লক্ষণ।
প্রতিরোধ: রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত হলে প্রথমে জানতে হবে এটি কতটা তীব্র। সে অনুযায়ী চিকিৎসা। এরপর নেপথ্য কারণ খুঁজে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
রক্তশূন্যতা এড়াতে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। কচু ও কচুশাক, পালংশাক, কলিজা, কাঁচা কলা ও খেজুরে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে। তবে অনেক সময় খাবারের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ না হলে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্লাড ট্রান্সফিউশন বা রক্ত সঞ্চালন করাও লাগতে পারে।
গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতি এড়াতে সুষম খাবারের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে ষাটোর্ধ্ব নারীদের রক্তশূন্যতার সঙ্গে খাবারে অরুচি, ক্রমে ওজন কমে যেতে থাকলে তা অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে, দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ