Print Date & Time : 22 July 2025 Tuesday 2:54 pm

‘কে বলে মানুষ মরে’

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ:‘কে বলে মানুষ মরে/মানুষ মরলে পরে বিচার হবে তার/ওরে ক্ষ্যাপা বুঝলাম না ব্যাপার…’। মানুষ জীবন থেকে ছুটি নেয়, নাকি সত্যি সত্যিই মরে যায় এ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল কুটি মনসুরের। মরণে খুব একটা বিশ্বাস ছিল না তার। তাই লিখেছিলেন এমন কালজয়ী গান। কিন্তু মরণ এসে একদিন সত্যিই ছুঁয়ে যায় জীবনকে। ছুটি নিতে হয় জীবন থেকে। ঠিক তেমনি ছুটি নিয়েছেন প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও শিল্পী  কুটি মনসুর।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাংলা গানের এই অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

১৯২৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার লোহারটেক গ্রামে জš§গ্রহণ করেন সত্তর ও আশির দশকে বাংলাদেশের আধুনিক বাংলা গানের পরিচিত নাম কুটি মনসুর। তার লেখা ‘আমি কি তোর আপন ছিলাম না রে জরিনা’ গানটি শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কুটি মনসুরের নাম না জানলেও গানটি কিন্তু এখনও লোকের মুখে মুখে। এরকম আরও অনেক গান রয়েছে তার। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘আইলাম আর গেলাম, পাইলাম আর খাইলাম ভবে কিছুই বুঝলাম না’, ‘আমার তালাশ নিক বা না নিক সই, আমি তারে তালাশ করি’সহ অনেক কালজয়ী গান। কুটি মনসুর ৬০ বছরের সংগীতজীবনে প্রায় আট হাজার গান লিখেছেন। এসবের মধ্যে পল্লিগীতি, আধুনিক, জারিসারি, পালাগান, পুঁথিপাঠ, ভাটিয়ালি, মুর্শিদী, মারফতি, আধ্যাত্মিক, দেহতত্ত্ব, হামদ-নাত ও ইসলামি গান অন্যতম।

কুটি মনসুরের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রায় সব তারকা শিল্পী। তার কথা ও সুরে গান গেয়েছেন সৈয়দ আবদুল হাদী, এন্ড্র– কিশোর, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, দিলরুবা খান, নিনা হামিদ, রথীন্দ্রনাথ রায়, ফকির আলমগীর, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, ফিরোজ সাঁই, কিরণ চন্দ্র রায়, মুজিব পরদেশী, মমতাজ, ডলি সায়ন্তনী, মীনা বড়ুয়া, এমএ মতিন, জানে আলম, রবি চৌধুরী, মনির খান, শুভ্র দেবসহ আরও অনেকে। শ্রোতারা শিল্পীর মুখে গান শুনে এক বাক্যে বলেনÑগানটি অমুক শিল্পীর। তারা গীতিকার-সুরকারের নাম জানতে চান না। ফলে হারিয়ে যান গীতিকার-সুরকাররা। কিন্তু কুটি মনসুর তাদের দলে নন। সত্যিই মরেন না কুটি মনসুররা।