Print Date & Time : 10 September 2025 Wednesday 3:51 pm

কোনো কাজই ছোট নয়

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা যে কী বেহাল, তা সবার বোধগম্য। দেশের শিক্ষার ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য ও আকাশ-পাতাল ব্যবধান গ্রাম ও শহরে রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে চালু হওয়া গতানুগতিক ব্যবস্থা আজও আমাদের দেশে বিরাজমান, যা প্রগতিশীল বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে আরও আগে। এখনও পড়ানো হয় পুঁথিগত মুখস্থ বিদ্যা। শিক্ষার গুণগত মানের থেকে পরিমাণগত মানে জোর দেয়া হয়। বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করে কর্মক্ষম জনশক্তি তৈরিতে কর্মমুখী ব্যবহারিক শিক্ষা এখন সময়ের দাবি। একজন শিক্ষার্থীকে যা পড়ানো হয়, তা যাতে সে বাস্তবিক অর্থে মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ করতে পারে।

চীনের ইঞ্জিনিয়াররা তাদের বাস্তবনির্ভর প্রযুক্তি জ্ঞান দ্বারা দেশে পদ্মা সেতুর মতো বহুমুখী সেতু তৈরি করল। আর আমাদের প্রজš§ পড়বে পদ্মা সেতুর কয়টা পিলার ও স্প্যান আছে প্রভৃতি। এই হচ্ছে বিস্তর তফাত উন্নত দেশ ও আমাদের মাঝে। চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতার জন্য আজ যা প্রয়োজন, তার কতটুকুই বা শিক্ষা পায় কোনো শিক্ষর্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে, এটাই বড় প্রশ্ন। প্রযুক্তি জ্ঞান, কম্পিউটার শিক্ষা, ভালো মানের ইংরেজি জানা, একটা প্রেজেন্টেশন কিংবা ই-মেইল বড় প্রয়োজন চাকরির বাজারে। অথচ সত্য এটাই যে, এমন কোনো শিক্ষা নেই বললেই চলে উচ্চশিক্ষা স্তরে। ফলাফল হিসেবে পুথিগত বিদ্যা অর্জন করে লাখো শিক্ষার্থী প্রতিবছর বের হয়ে যাচ্ছে, চাকরির ক্ষেত্রে যাদের যথযথ দক্ষতা নেই। আজকাল কালোটাকার প্রভাব, ঘুষ কিংবা দুর্নীতি দিন দিন প্রতিটি সেক্টরে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

দেশ ও জাতির সৎ, মেধাবী ও সোনালি সন্তানরা বঞ্চিত হয় হরহামেশাই। টাকা, ক্ষমতা, কিংবা রাজনীতির জেরে অসৎ, অযোগ্য ও মেধাহীন চক্র আসীন হচ্ছে উচ্চ পদে সব সেক্টরে।

এতে গরিব ও মেধাবীরা বেকার থেকে যাচ্ছে। একটি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে প্রয়োজন সৎ মানসিকতা ও সদিচ্ছা। কিন্তু বড় বড় সেক্টরে যদি নিয়োগ হয় ক্ষমতার প্রভাব কিংবা প্রশাসনিক ফাঁক-ফোকরের মাধ্যমে, তাহলে তাদের সৎ মানসিকতা থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। দেশে শিক্ষিত বেকারদের মানবসম্পদে রূপান্তর করতে হলে প্রথমে সবার থাকতে হবে সদিচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টা। প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা পাচার না করে সেই অর্থ দিয়ে দেশের অবকাঠামো তৈরি করলে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হবে, ঘুচে যাবে অভাব এবং এগিয়ে যাবে দেশ। একই সঙ্গে দেশের পুঁথিগত বিদ্যার বদলে বাস্তবসম্মত কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। চাকরির দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সব প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা থাকা চাই শিক্ষাঙ্গনে। মনে রাখতে হবে কোনো কাজই ছোট নয়।

লুৎফর রহমান লাভলু

শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

ঢাকা কলেজ, ঢাকা