নিজস্ব প্রতিবেদক: যে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল হয়েছে, তার কোথাও ‘কৌশল করে’ বিএনপি অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির গতবারের প্রার্থীর ভাতিজার ‘স্বতন্ত্র’ পরিচয়ে মনোনয়নপত্র জমা এবং আরও কয়েকটিতে দলের নেতাদের অংশ নেয়ার প্রস্তুতির খবর আসার পর এমন প্রতিক্রিয়া দিলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি যে, কোনো রকমের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা যাচ্ছি না। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমরা পরিষ্কার বলে দিয়েছি যে, এখানে মেয়র নির্বাচনই বলেন বা কমিশনার নির্বাচনই বলেন, এখানে আমাদের দলের কোনো অংশগ্রহণ থাকবে না।’
গতকাল শনিবার ঢাকার শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে যান দলের মহাসচিব। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি গাজীপুরসহ পাঁচটি সিটি নির্বাচনেই প্রার্থী না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে সিলেট, গাজীপুর ও বরিশালে দলটির সঙ্গে সম্পৃক্তরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। খুলনায়ও বিএনপির গতবারের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ভোটে দাঁড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগকে ‘ফাঁকা মাঠে গোল’ দেয়ার সুযোগ করে দেয়া উচিত নয়।
শুধু রাজশাহীতে এখন পর্যন্ত বিএনপির কারও প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতির বিষয়টি জানা যায়নি। এর মধ্যে সবার আগে ভোট হতে যাওয়া গাজীপুর স্বতন্ত্র পরিচয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ভাজিতা সরকার শাহনুর ইসলাম রনি।
গত বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে রনি সাংবাদিকদের বলেন, দলীয়ভাবে নির্বাচনে না এলেও তার সঙ্গে ‘বিএনপির সমর্থন’ রয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকে বলা হচ্ছে, ভোটে না আসার কথা বলে বিএনপি ‘স্বতন্ত্র’ পরিচয়ে প্রার্থী দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দাবি, বিএনপি এভাবে ‘ঘোমটা পরে’ ভোটে অংশ নিচ্ছে।
চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে ১৪ শতাংশ ভোট পড়া নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। তিনি মনে করেন, নির্বাচনের ওপর আস্থা হারিয়ে কেন্দ্রবিমুখ হয়েছে মানুষ।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনগুলোতে জনগণ অংশগ্রহণ করছে না, ভোটাররা কেন্দ্রে যাচ্ছে না। সম্প্র্রতি যে ভোট হয়ে গেল (চট্টগ্রামে উপনির্বাচন) সেই ভোটে মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে গেছে। সুতরাং জনগণ বোঝে, গোটা বিশ্ব বোঝে এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে কোনো দিনই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, জনগণ সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।’
আওয়ামী লীগ নির্বাচন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। বলেন, “এই সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে তাদের পুরোনো ‘লক্ষ্য’ সেই একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশালের মতো একটা শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সেই লক্ষ্যে তারা ২০১৪ সালে নির্বাচনকে সম্পূর্ণভাবে একটা প্রহসনে পরিণত করে, জনগণ তাতে ভোট দিতে যায়নি। একইভাবে ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগের রাতে ভোট করে জোর করে তারা ক্ষমতায় বসে আছে। জনগণ সেখানেও অংশগ্রহণ করেনি।”
বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও মনে করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, ‘তারা সেই ভাবমূর্তি তৈরি করতে চায়।’
জনগণ এবার ‘জেগে উঠেছে’ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণ এদের পরাজিত করবে এবং সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে।’
বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি এসএম জিলানি ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের নেতৃত্বে অন্য নেতাদের নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতার সমাধিতে যান ফখরুল।
গত ২০ এপ্রিল স্বেচ্ছাসেবক দলের ২১৩ সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেয় বিএনপি।
সম্প্র্রতি কারামুক্ত বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।