মির্জা ফখরুলের প্রশ্ন

কোনো সভ্য দেশে সরকার হরতাল দেয়?

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমান সরকার ‘অপশাসনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে’ বলে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোনো সভ্য দেশে ‘সরকারের হরতাল দেয়ার’ কথা চিন্তাই করা যায় না। বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘটে জনভোগান্তির কথা তুলে ধরে গতকাল শুক্রবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক সমাবেশ করা তাদের সাংবিধানিক অধিকার, কিন্তু রাষ্ট্র ও আওয়ামী লীগ সরকার তাতে ‘বাধা সৃষ্টি করছে’। কোনো সভ্য দেশে চিন্তা করতে পারেন যে, সরকার হরতাল দিয়ে দেয়? এরা হরতাল দিচ্ছে। বরিশালে পাঁচ দিন আগে থেকে বলে দিয়েছে যে, পরিবহন বন্ধ থাকবে।

এখন হঠাৎ করে নৌ-পরিবহনও সরকার বন্ধ করে দিয়েছে বলে দাবি করে ফখরুল বলেন, এমনকি যে স্পিডবোটগুলো ভোলা থেকে বরিশালে আসে, সেগুলো পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। আজকে আবার এক পত্রিকায় দেখলাম প্রাইভেট কারও নাকি বন্ধ করে দিয়েছে। এটাকে কোন ক্যাটেগরিতে ব্যাখ্যা করবেন তারা?

খালেদা জিয়াকে ‘জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে আন্দোলন দমানো যাবে না’ বলে হুশিয়ারি দেন মির্জা ফখরুল। বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠানো হবেÑক্ষমতাসীনদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দলের মহাসচিব বলেন, ‘তারা যে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারা যে বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না; রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই এ ধরনের উক্তি করেছেন তিনি।

‘হুমকি-ধমকিতে’ আন্দোলন থামানো যাবে না বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার জনগণকে ভয় পাচ্ছে, মানুষকে ভয় পাচ্ছে। যেভাবে মানুষ জেগে উঠছে, এখানে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে। আমি বিশ্বাস করি, এখানে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তাদের (আওয়ামী লীগ) সরে যেতে হবে। সে কারণেই আমরা অনেকবার বলেছিলাম যে, এখনও সময় আছে সেইভ এক্সিট নেন, রিজাইন করেন এবং ক্ষমতা কেয়ারটেকার গভর্মেন্টের হাতে দেন। তাহলে একটা সেভ এক্সিট হতে পারে। তা না হলে তার আগেও বলেছি, এখনও বলছি যে, পালানোর পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে যেসব সংকট তৈরি হয়েছে, এটা সম্পূর্ণভাবে তাদের দুর্নীতির কারণে তৈরি হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে, পদে পদে  তারা দুর্নীতি করছে। আজকেও পত্রিকায় বেরিয়েছে, গত ১০ বছরে কানাডায়

যারা মাইগ্রেট করেছেন, তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ হচ্ছে বাংলাদেশি। এগুলোর প্রমাণ পাবেন, যেমন আপনার রেমিট্যান্স কমে গেছে। রেমিট্যান্স কমছে, কিন্তু আপনার শ্রমিকের সংখ্যা কিন্তু কমেনি, আবার বেড়েছে। তাহলে রেমিট্যান্সটা কোথায় যাচ্ছে? আমি আগের দিনও বলেছি, এ রেমিট্যান্স বিদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই কাজটা করছেন সরকারি দলের সঙ্গে যারা জড়িত আছেন। তারাই এটাকে হুন্ডি করে পাচার করছেন, যে কারণে দেশে আজকের সংকটটা সৃষ্টি হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার ‘অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে’ এদেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে ‘ধ্বংস’ করেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রকে তারা ধ্বংস করে নতুন একটা মোড়ক দিয়েছে যে, একটা গণতন্ত্রের মোড়ক আছে, কিন্তু ভেতরে তা পুরোপুরিভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা, যেটা হচ্ছে বাকশালের মতো। আপনারা দেখেন যে, গত এক যুগে তারা আমাদের ৩৫ লাখের ওপরে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, ছয়শ’র ওপরে নেতাকর্মীকে গুম করেছে, সহাস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে।

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ দিয়ে বিএনপির চলমান বিভাগীয় সমাবেশ শেষ হবে বলে জানান ফখরুল। তিনি বলেন, আমরা বিভাগীয় সমাবেশ করছি। ঢাকায় হবে লাস্ট বিভাগীয় সমাবেশ ১০ ডিসেম্বর। আমরা আমাদের ঘোষণা দিয়েছি; আমরা প্রত্যেক বিভাগে সমাবেশ কবে করব, তা দিয়েছি। এরপর দায়দায়িত্ব তো সরকারেরÑতারা কী করবে না করবে।

আওয়ামী লীগ কী ঘোষণা করল না করলÑআমরা আমাদের লক্ষ্যে অটুট, অবিচল। সেখান থেকে আমরা এক পাও নড়ব না এবং দেশের মানুষও নড়বে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে সংগ্রাম আমরা শুরু করেছি, সেই সংগ্রাম আমরা চালিয়ে যাবÑঅ্যাট এনি কস্ট।