মেজবাহ হোসেন: বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ইংরেজিতে ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন সংক্ষেপে ইউজিসি। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে এর মিশন ও ভিশন বলা আছে; যার মধ্যে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও আর্থিক চাহিদা নিরূপণ করা, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন, গবেষণার জন্য আধুনিক অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ১৯৭৩ সালের এই স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ৫০ বছরে কতটুকু সফলতা অর্জন করেছে আর কোন পথে চলছে তার একটি নির্মোহ মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। কারণ এ প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমাদের উচ্চশিক্ষা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
উচ্চশিক্ষার গুণগত মান অর্জনের লক্ষ্যে যে কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করা ইউজিসির কাজ, বাংলাদেশের অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে কি সেটি যথাযথভাবে করা হয়েছে? উত্তর হলো একেবারেই হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় আর সরকারি স্নাতক কলেজের মধ্যে সব থেকে বড় পার্থক্য হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন, উন্নত অবকাঠামো, বিশেষজ্ঞ ও পর্যাপ্ত জনবল আর এসব উপাদান একত্রে নিশ্চিত করে বিশ্বমানের শিক্ষা, গবেষণা এবং আবিষ্কার। কিন্তু গত দুই দশকে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রূপ লাভ করেছে সেগুলোর স্বায়ত্তশাসন অনেকটাই ইউজিসির বেঁধে দেয়া নতুন নতুন নিয়ম আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর যেভাবে তুড়ি মেরে বিভিন্ন নিয়মকানুন চাপানো যায় এত সহজে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব হয় না (সরকারি স্কুল, কলেজ এমনকি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানেও নয়)। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়সমূহ একাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট ও সিনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ার কথা কিন্তু ইউজিসি যখন অতি সক্রিয় হয়ে একতরফাভাবে কোনো নীতিমালা প্রণয়ন করে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন বলে কিছু থাকে না।
ভয়ংকর রকম অবকাঠামো সংকটের কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই একটি ক্লাসরুম একই দিনে একাধিক বিভাগের একাধিক ব্যাচ ভাগাভাগি করে ব্যবহারের দৃশ্য নতুন নয়, একটি ব্যাচকে বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় কখন চলমান ক্লাস শেষ হবে। ব্যবহারিক ল্যাবের অবস্থা আরও করুন, অনেক সময় নির্ধারিত সংখ্যক ব্যবহারিক শেষ না করেই সেমিস্টার ফাইনাল বা ইয়ার ফাইনাল শেষ করতে বাধ্য হচ্ছে বিভাগগুলো। এই অপুষ্ট ও রুগ্ণ শিক্ষার উন্নয়নে ইউজিসির কোনো উদ্যোগ বা কর্মতৎপরতা সেভাবে দৃশ্যমান নয়। ঢিমেতালে যেটা যেভাবে চলছে চলুক, আসতে আসতে অবস্থার উন্নতি হবেÑএমন ভাবনাতেই যদি আমাদের মানিয়ে চলতে হয় তাহলে ইউজিসির দরকার কি?
নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক সংকট চরমে। বিভাগপ্রতি ৪-৫ জন প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চললেও বছরে ১-২টির বেশি শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয় না; আগত সেই ১-২ জনের বিপরীতে আবার ১-২ জন চলতি শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে চলে যায়; ফলে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে না। শিক্ষকরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ধমনি, যাদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো প্রবাহিত হয়। অপর্যাপ্ত শিক্ষক ও স্বাভাবিকের থেকে ৩-৪ গুণ বেশি ওয়ার্কিং লোড দিয়ে জ্ঞানের এই স্বাভাবিক প্রবাহ কি প্রত্যাশা করা যায়? এই চরম সংকট মোকাবিলায় সরকার ও ইউজিসির যুগপৎভাবে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করা আবশ্যক ছিল কিন্তু সেটি না করে বরং এই সংকটের ভয়াবহতা স্বীকার বা অনুধাবন করার বিপরীতে বিষয়টিকে শিক্ষাঙ্গনের সর্দি-জ্বর হিসেবে দেখতেই তারা আগ্রহী। শিক্ষকতা পেশায় বিবিধ অসঙ্গতি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অপ্রাপ্তির পর অতিরিক্ত কাজের চাপ একদিকে নবীন শিক্ষকদের এই পেশায় অনীহ করে তুলছে; অন্যদিকে তারা গবেষণায়, গবেষণা পত্র প্রকাশ বা বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় পাচ্ছে না, যা তাদের নিয়মিত পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতির জাতীয় নীতিমালা থাকা বাঞ্ছনীয়; কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় আর শর্তে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে শিক্ষক সমাজ বিরক্ত এবং রুষ্ট। শিক্ষকরা মনে করে শিক্ষকদের শৃঙ্খলিত পদোন্নতি আর বিদ্যমান সুবিধাকে বাধাগ্রস্ত করতেই আমলাদের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করেছে ইউজিসি (এমন হীন প্রচেষ্টা ২০১৫তেও একবার করা হয়েছিল)। নতুবা যেখান থেকে যেসব সর্বোচ্চ ন্যূনতম শর্ত তারা খুঁজে পেয়েছে সেগুলোর সমন্বয়ে এই নীতিমালা করতে পারত না। যেমনÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিধারীদের প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য ৩ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা ও ৩টি প্রকাশনা প্রয়োজন (চ.বিতে ৩ বছর + ১টি প্রকাশনা) আর প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে দরকার ২ বছরের অভিজ্ঞতা আর ১/২ টি প্রকাশনা; অভিন্ন নীতিমালায় সবার জন্য ৩ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা ও ৩টি প্রকাশনা কেন বেঁধে দেয়া হলো? পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের সরাসরি সহকারী অধ্যাপক পদে যোগদানের সুযোগকে রহিত করে কেন ন্যূনতম ১ বছরের অভিজ্ঞতার শর্ত আরোপ করা হলো (চ.বি থেকে ধার করা)? সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের অধ্যাপক হওয়ার জন্য ১২ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হলেও বাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটি ১০ বছর ছিল, কেন সেটিকে সবার জন্য ১২ বছর করা হলো? মাস্টার্স ডিগ্রিধারীদের অধ্যাপক হওয়ার জন্য বুয়েটের নিয়ম হচ্ছে ন্যূনতম ২০ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন কিন্তু বাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সেটি অনেক কম (১২-১৫ বছর), তাহলে কেন এক্ষেত্রেও সবার জন্য ২০ বছর করা হলো? আর ১২টি প্রকাশনার শর্ত কোথায় থেকে আমদানি করা হয়েছে (সম্ভবত সিকৃবি) যেখানে বুয়েটে এই সংখ্যা ৬টি? এসবের জবাব ইউজিসির কাছে কি আছে? এভাবে কোনো যুক্তিযুক্ত পর্যালোচনা ও যথাযথ হোমওয়ার্ক ছাড়া শুধু কপি পেস্ট করে শিক্ষকদের স্বার্থ হানিকর নীতিমালা করা অনাকাক্সিক্ষত ও অপেশাদারি আচরণ।
এই নীতিমালা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি নিয়মের সমন্বয়ে নি¤œরূপ হতে পারতÑ
এক. স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রভাষকদের ক্ষেত্রে সহকারী অধ্যাপক হওয়ার জন্য ২ বছরের অভিজ্ঞতা ও ২টি গবেষণা পত্র, এমফিল ডিগ্রিধারীদের জন্য ১ বছরের অভিজ্ঞতা ও ২টি গবেষণা পত্র, পিএইচডি ও ১টি গবেষণা পত্র থাকলে সরাসরি সহকারী অধ্যাপক; দুই. পিএইচডি থাকলে ১১ বছরে অধ্যাপক (২+৫+৪), এমফিলের ক্ষেত্রে সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপক টেনিউর দুটিতে ১ বছর করে বাড়িয়ে মোট ১৩ বছর (২+৬+৫) এবং শুধু স্নাতকোত্তর ডিগ্রির ক্ষেত্রে আরও ২ বছর বাড়িয়ে মোট ১৫ বছরে (২+৭+৬) অধ্যাপক হওয়ার সুযোগ রাখা যেত; প্রতি ক্ষেত্রেই ন্যূনতম প্রকাশনার সংখ্যা হতে পারত ৮টি (২+৩+৩)। যারা সরাসরি সহকারী অধ্যাপক পদে যোগদান করত তাদের ক্ষেত্রে এই সময় মোট ১০ বছর (৬+৪) করা যেত অনুরূপ সংখ্যক প্রকাশনা থাকার শর্তে। এমন একটি রেসনাল নীতিমালা হলে শিক্ষকদের অসন্তোষের সুযোগ ছিল না।
অন্যান্য স্তরের শিক্ষকদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি যে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ব্যাংকের জুনিয়র অফিসারের চাকরি পেলে শিক্ষকতা ছেড়ে দিত, একজন হাইস্কুলের শিক্ষক ব্যাংকের অফিসার ক্যাশ পদে চাকরি পেলেও শিক্ষকতা করত না, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে চাকরি পাওয়া অনেকেই শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দেয়নি এমন নজিরও আছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন, সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে এখানে তারা আসে শুধু শিক্ষক হবেন বলে আর শিক্ষকতা করবেন বলেই। সুতরাং শিক্ষকদের সঙ্গে প্রবঞ্চনা করে রাষ্ট্রের লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই। একইভাবে প্রাথমিকের তুলনায় হাইস্কুল সুপিরিয়র প্রতিষ্ঠান তাই হাইস্কুলের শিক্ষকদের গ্রেড ও বেতন প্রাথমিকের তুলনায় বেশি, কলেজ শিক্ষকরা হাইস্কুলের সাপেক্ষে সুপিরিয়র ফলে কলেজ শিক্ষকদের গ্রেড ও বেতন হাইস্কুলের থেকে বেশি। অনুরূপভাবে জেলা বা অধস্তন আদালতের থেকে উচ্চ আদালত সুপিরিয়র প্রতিষ্ঠান সে কারণে উচ্চ আদালতের বিচারকদের সম্মান, বেতন ও প্রটোকল অধস্তন আদালতের থেকে বেশি। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের তুলনায় সুপিরিয়র প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রভাষকদের বেতন ও গ্রেড কীভাবে কলেজের অনুরূপ হয়? যৌক্তিকভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রভাষকদের গ্রেড ৭ম হওয়ার বাঞ্ছনীয় এবং ইউজিসি এই বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারত, কিন্তু এই ব্যাপারে তারা নির্বিকার!
যে দেশে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লক্ষ কোটি টাকা লোপাট করা হয়, খিচুড়ি রান্না ও সাঁতার শেখার জন্য বিদেশ ভ্রমণ করানো হয়, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও বিদ্যুৎকেন্দ্র ৩-৪ গুণ বেশি ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়, পর্দা ও বালিশ কাণ্ড ঘটে, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৩-৪ গুণ বেশি দামে অপ্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার উপকরণ কেনা হয়, জাতীয় নির্বাচনের আগে ডিসি-ইউএনওদের জন্য কোটি টাকার গাড়ি কেনা হয় সেই দেশে আমাদের একজন কাজী শহীদুল্লাহ আছেন যিনি সরকারি অর্থের অপচয় রোধে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ন্যূনতম পারিতোষিক মজুরি বেঁধে দিয়ে নীতিমালা জারি করেন! এমন মহান একজন দেশপ্রেমিকের জন্য দোয়া রইল; যাতে আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করে।
যা-ই হোক, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণে ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে নি¤œলিখিত বিষয়ে ইউজিসির মনোযোগী হওয়া জরুরি।
এক. চাপিয়ে দেয়া নিয়োগ পদোন্নতির অভিন্ন নীতিমালা রহিত করে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত শিক্ষক সমিতি ও সিনিয়র অধ্যাপকদের মতামতের ভিত্তিতে একটি বাস্তবসম্মত নীতিমালা প্রণয়ন করা, কারণ ইতোমধ্যেই এই নীতিমালা অনুসরণ করাÑনা করা নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে; দুই. জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রয়োজনীয় পদ অনুমোদন দিয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা। শুধু প্রভাষক নির্ভর শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের বিশেষ শর্তে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরাসরি সহকারী অধ্যাপক পদে এবং যাদের ন্যূনতম ২-৩ বছরের পোস্টডক গবেষণার অভিজ্ঞতা আছে তাদের নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রকাশনা (যেমন ১০টি) থাকা সাপেক্ষে সরাসরি সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করা। সংকট আমাদেও, তাই এর সমাধানও আমাদেরকেই করতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে সংকট মোকাবিলা করাই উত্তরণের একমাত্র পথ; তিন. উল্লিখিত সংকটগুলোর কারণে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক মান অনেক নিচে নেমে গেছে। এমতাবস্থায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জাতীয়ভাবে একটি ন্যূনতম একাডেমিক স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়ন করা আবশ্যক; যেমন ক্রেডিট আওয়ার, ক্লাস সংখ্যা, সিলেবাসের পরিধি, মানবণ্টন ইত্যাদি। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পড়ালেখার মানের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হবে। পুরোনো ও বড় বিশ্ববিদ্যালয় যাদের পর্যাপ্ত জনবল ও অবকাঠামো আছে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তির সুযোগ করে দেয়া। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা যাবে; চার. প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্ভব না হলেও অঞ্চল ভিত্তিকভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক গবেষণাগার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা, এর ফলে আশপাশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে গবেষণার সুযোগ পাবে; পাঁচ. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মিডটার্ম, সেমিস্টার ফাইনাল ও ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য একটি করে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এক্সাম গ্যালারি স্থাপন করা যেখানে পরীক্ষা চলাকালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। পড়ালেখার পরিবেশ নির্বিঘœ করতে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাশাপাশি হলভিত্তিক রিডিং রুম চালু করা; ছয়. শিক্ষার্থীদের হতাশা, মাদকাসক্তিসহ যেকোনো প্রকার বিপথে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে আধুনিক জিমনেশিয়াম ও স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণের বিকল্প নেই। ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে শুধু দু-একটি সেমিনার আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের বিপথে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে না; সাত. শিক্ষকদের জন্য কর্ম পরিবেশকে উপভোগ্য করে তুলতে হবে। এজন্য টিচার্স ক্লাবগুলো আধুনিকায়ন করা, যেখানে খেলাধুলা, শরীরচর্চা ও বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে।
সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে পরিণত করতে হবে; যেন চূড়ান্তভাবে হতাশাগ্রস্ত একজন শিক্ষার্থীও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পা দিয়েই একটি নতুন জীবনের হাতছানি দেখতে পায়, নব উদ্যমে পথচলার প্রেরণা খুঁজে পায়।
শিক্ষক, রসায়ন বিভাগ, হাবিপ্রবি
(যুক্তরাষ্ট্র থেকে)